।। মাহফুজুর রহমান ।।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি আলোচিত খবর ছিলো সাগর-রুনি হত্যাকান্ড। বিবিসি বাংলার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব দাবি করছে, তাদের তদন্তে কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আদালতের কাছে ১০৪ বার সময় নেয়ার পরও র্যাব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি এই সাংবাদিক দম্পতিকে ঢাকায় পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় তাদের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । ঘটনার সময় ঐ বাসায় থাকা তাদের একমাত্র শিশু সন্তান মাহি সরওয়ার মেঘ বেঁচে যায়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১২ বছরেও তদন্তে অগ্রগতি নেই। এমন পরিস্থিতিতে সান্ত্বনা পাওয়ার পথও খুঁজে পাচ্ছে না সাংবাদিক দম্পতির বিপর্যস্ত পরিবার দু’টো।
শুধু সাগর রুনি দম্পতিই নয় শেখ হাসিনার শাসনামলের ১ম ধাপে সাংবাদিক মৃত্যুর ঘটনা ২১ আর ২য় মেয়াদে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ এ । এ তথ্যটি পাওয়া যায় পরিবর্তন পত্রিকার ২৯ আগস্ট ২০১৮’র একটি রিপোর্ট থেকে। আসকের তথ্যানুসারে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে খুন হয়েছেন ৯ জন সাংবাদিক। বর্তমান আওয়ামী শাসনামলে মোট ৬৩ জন সাংবাদিক খুন হন।
আর যদি সাংবাদিক নির্যাতন তথা শুধু আক্রমণ বা আহতের হিসাব দেই তাহলে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আসকের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে সংখ্যাটা সাতশরও অধিক, ৭০৫ জন। আর এসব আহত, হত্যা, নির্যাতন মিলিয়ে মোট হয়রানির শিকার ১২২৬ জন।
শুধু সাংবাদিকরাই নয়। সংবাদপত্র অফিসও হামলার শিকার হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ রাজধানীর মগবাজারে দৈনিক সংগ্রামের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নাম হলেও হামলাকারীরা ছিলো স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তারা পত্রিকার কম্পিউটারসহ প্রকাশনার সমস্ত যন্ত্রাংশ অচল করে দেয়। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২০১৩ সালে, দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, সিএসবি, ইসলামিক টিভির পর একসঙ্গে ৩৫টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয় নির্বাহী আদেশে। এসব সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও আনা হয়নি। যার ফলে হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়েন। এছাড়াও ইটিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বহুদিন জেল খেটেছেন। ৪ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখের রাতে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত একটি সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫০ মিনিটের একটি বক্তব্য ইটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের এক দিন পর ৬ জানুয়ারি ভোরে আবদুস সালামকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাঁকে পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তারপর ২৫ নভেম্বর ২০১৫ এ অর্থ ঋণ আদালতের ১২ ধারা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির দখল নেয় আওয়ামী বিজনেস মেগনেট এস আলম ও তার গ্রুপ। এরপর নতুন মালিকানায় চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান (গোলাপ)। তখন থেকেই এই চ্যানেলের সৎ ও যোগ্য সাংবাদিকরা বিতাড়িত। একুশের চোখ অনুষ্ঠানের এক সাংবাদিক ইলিয়াস সড়ক আন্দোলনের সময় এক ভিডিও বার্তায় তুলে ধরেন ইনুরা কিভাবে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে গণমাধ্যমের উপর। তাও নির্লজ্জভাবে বলা হচ্ছে, গণমাধ্যম স্বাধীন।
মাহফুজুর রহমান- লেখক, সাংবাদিক