করোনা মহামারিকালে সুন্দরবনের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল। এরপরও জীবিকার তাগিদে সুন্দরবনে ছুটে গেছেন বহু মৎস্যজীবী। গভীর জঙ্গলের নদী-নালায় মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। পশ্চিমবঙ্গের বন দপ্তর জানিয়েছে, সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে গত ২ বছরে ৩০ মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর খাঁড়িতে প্রচুর কাঁকড়া ও সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এই কাঁকড়া ও মাছ শিকার করে ওই এলাকার মৎস্যজীবীরা জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন ১ কেজি কাঁকড়ার দাম ৪০০ রুপি। সামুদ্রিক মাছেরও বেশ ভালো দাম পান তাঁরা। এ জন্য বাঘের সঙ্গে লড়াই করে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করে আসছেন এই মৎস্যজীবীরা।
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে পশ্চিমবঙ্গে বিধিনিষেধ শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় সুন্দরবনের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। মাছ শিকারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুন্দরবনে যান মৎস্যজীবীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে জীবন দিতে হয় তাঁদের অনেকের।
পশ্চিমবঙ্গের বন দপ্তরের হিসাব অনুসারে, সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে গত ২ বছরে ৩০ মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া চার–পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। বাঘের আক্রমণে বেশি মৃত্যু হয়েছে গোসাবা, পীরখালি, ঝিলা, লাহিড়ীপুর, সাতজেলিয়া ও এর আশপাশের এলাকায়।
সুন্দরবনে মাছ শিকারের ওপর বন দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা এখনো চলছে। অনুমতি না নিয়ে সুন্দরবনের গভীরে না যাওয়ার জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বন দপ্তর।
পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে এখন ৯৬টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ২০ রাজ্যে বাঘের জন্য সংরক্ষিত ৫৩টি এলাকায় মোট বাঘের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৭।
বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা নিয়ে সুন্দরবনের অবস্থান। সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে আর ৪ হাজার ২৬০ বর্গকিলোমিটার পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে।