বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওর, নদী, জলাশয়ে মাছ কমে যাচ্ছে। হারিয়ে গেছে কয়েক প্রজাতির মাছ। তিলা শোল, ঢেলার মতো পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাছ হাওরে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। বিপন্ন তালিকায় আছে কিছু মাছ।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
‘টেকনিকস অ্যাডাপশন অ্যান্ড ফর্মুলেশন অব গাইডলাইনস ফর সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট অব হাওর অ্যান্ড বিল ফিশারিজ’ শিরোনামে এই গবেষণা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। তিনি মাছের উৎপাদন কমার কারণ শনাক্ত, কয়লা ধোয়া পানির কারণে মাছে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা ছাড়াও হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জলাভূমি, নদী ও জলজ জীববৈচিত্র্যের ওপরও গবেষণা করেছেন।
মাছের উৎপাদন কমার কারণ সম্পর্কে মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্নভাবে হাওর দূষিত হচ্ছে। পলি জমে হাওর ভরাট হচ্ছে। এটা মারাত্মক দূষণ। এবার বন্যায় সে পরিমাণ আরো বেড়েছে। এ ছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কখনো বেশি বৃষ্টি, কখনো কম বৃষ্টি, কখনো মোটেও বৃষ্টি হচ্ছে না। মৎস্যসম্পদ কমে যাওয়ার এটা একটা বড় কারণ। এতে পুরো ইকোসিস্টেম নড়ে যাচ্ছে। এতে ছোট যে মাছ সেগুলোর ক্ষতি বেশি হয়। বেশির ভাগ মাছই কিন্তু ছোট প্রজাতির। অন্তত ১০০-এর ওপর ছোট প্রজাতির মাছ আছে। মলা, ঢেলা, টেংরা, পুঁটি, চেলা নানা ধরনের মাছ। সিলেট অঞ্চলে এসব মাছ মার্চের শেষ দিক থেকে এপ্রিল এবং মে মাসে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম ছেড়ে দেয় এবং ডিম হাওরে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন : কোনো বছর বৃষ্টি মে মাসে শুরু হলো। কিন্তু মাছ তো এপ্রিলেই পরিণত হয়ে গেছে। দেরিতে বৃষ্টির কারণে সে ডিম ছাড়তে পারল না। প্রজনন যদি এক মাস পেছায় তাহলে সামগ্রিক বৃদ্ধিটাও এক মাস পেছায়। আবার বেশি বৃষ্টি হলে আকস্মিক বন্যা। এটাও পুরো ইকোসিস্টেমকে নাড়িয়ে দেয়।
ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে অনেক মাছ হারিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড বলেন, ‘সব হাওরে কিন্তু সব ধরনের মাছ পাওয়া যায় না। বিভিন্ন জায়গার ইকোসিস্টেম অনুযায়ী একেকটা মাছ একেকটা জায়গায় বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। আকস্মিক বন্যায় ইকোসিস্টেমে প্রভাব ফেলায় মাছের ওপর বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। নার্সিং গ্রাউন্ডের ওপর প্রভাব পড়ে। বন্যার সময় মাছ খামার থেকে বেরিয়ে গেলেও দেশের ভেতরই থাকছে। কিন্তু নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হওয়ায় মাছের সামগ্রিক উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কিছু কিছু প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো পাওয়া গেলেও দুর্লভ। হয়তো সারা বছরে একটা বা দুইটা পাওয়া যায়। যেমন : তিলা শোল, ঢেলা মাছ। এগুলো এখন এখানে নেই বললেই চলে। বামুশ মাছের ঔষধি গুণ আছে। এখন কিন্তু পাওয়াই যায় না। তিনকাঁটা একটা মাছ আছে। ওই মাছটাও এখন পাওয়া যায় না। আরো এ রকম অনেক মাছ আছে। যেগুলো আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যদিও আইইউসিএন-এর নিয়ম হচ্ছে কোথাও যদি একটা মাছও পাওয়া যায়, তাহলে একে বিলুপ্ত ঘোষণা করা যাবে না। কিন্তু আমরা এ ক্ষেত্রে একে চরম বিপন্ন বলি। এই রকম চরম বিপন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০টি হবে। ’
যেসব প্রজাতির মাছ আগে অনেক ছিল এখন কমে গেছে, সেগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হ্যাচারির মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা মাছগুলো উন্মুক্ত জলাশয়ে ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড বলেন, এটা করা গেলে এসব মাছকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সিলেটে হ্যাচারি কম থাকলেও ময়মনসিংহে প্রচুর আছে। এগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।