এখন থেকে ৪২ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তৈরি করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড। প্রতিষ্ঠার বছর ছিল ১৯৭৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। এরইমধ্যে ওই ফান্ডে জমা হয়েছে ১৭ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৮ টাকা। আজ পর্যন্ত ওই ফান্ডের একটা টাকাও খরচ হয়নি। গত জুন মাসের আগ পর্যন্ত এ ধরনের ফান্ড আছে কি না তাই জানতেন না মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এতো বছরে ওই ফান্ড থেকে কেন এক টাকাও খরচ হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ১৩ই জুন কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সম্প্রতি ওই কমিটির কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ওই ফান্ডের টাকা জমা হয়েছে সিনেমা হলের টিকেটের একটা অংশ ও উচ্চ পর্যায়ের লোকজনের কাছ থেকে নেয়া টাকা। ফান্ড পরিচালনার জন্য কমিটিও আছে। সম্প্রতি ওই কমিটি নড়েচড়ে বসেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে কয়েকটি খাতে টাকা খরচের নির্দেশনা দিয়েছেন। খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- পিএইচডি, স্কলারশিপ, বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের উচ্চতর শিক্ষা। এখন ওই কমিটি নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা খরচের উদ্যোগ নিয়েছে। কতোদিনের মধ্যে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে তা বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ডের অর্থ সংগ্রহের জন্য হাট-বাজার ও বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা যায় কিনা সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বৈঠকে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ১৯৭৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড গঠন করা হয় এবং এ ফান্ডে ১৭ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৮ টাকা জমা আছে। এ কমিটির কাজ সম্পর্কে ও জমা টাকা থেকে কোনো কাজে কোনো টাকা খরচ করা হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে কোথায় কোন কাজে কতো টাকা খরচ করা হয়েছে তা তিনি জানতে চান। সভাপতির এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) শাহানা পারভীন জানান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই এ ফান্ড গঠন করা হয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এ ফান্ড থেকে কোনো টাকা খরচ হয়নি। এরপরই মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে সভাপতি জানতে চান- মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নামে একটি ফান্ড আছে এবং পরিচালনার জন্য একটি কমিটি থাকা সত্ত্বেও এখান থেকে কোনো টাকা খরচ হয়নি তাহলে এ কমিটির কাজ কি? মুক্তিযোদ্ধাদের কি কি সুবিধা দেয়া হবে? জবাবে মন্ত্রী বলেন, আপনি বলার আগ পর্যন্ত এই কমিটি সম্পর্কে আমি জানতাম না, সংশ্লিষ্টরা এ সম্পর্কে আমাকে কিছু জানাননি। ওই বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সচিব খাজা মিয়া বলেন, ফান্ডে মোট ১৭,৪৮,৩৬,৮৫৮ টাকা এফডিআর হিসেবে গচ্ছিত আছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ডের সকল অর্থ ও স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের হাতে দেয়া যায় মর্মে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার চেক তৈরি হয়েছে। টাকাটা পেলে বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তির জন্য জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর জমি হস্তান্তরের কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। অল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে পরামর্শ দিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ওই ফান্ডের জন্য শুধু সিনেমা হলের টিকেটের অংশের টাকা ছাড়া আরও খাত থাকতে পারে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ কল্পে এক সময় টেলিফোনের উপর সারচার্জ ছিল। নৌ-দুর্ঘটনায় লোক মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরিবারদের সাহায্য করার জন্য সদর ঘাটে প্রবেশ ফি’র একটি অংশ দিয়ে যেভাবে ফান্ড তৈরি করা আছে সেভাবে হাট-বাজার বা অন্য কোনো জায়গা থেকেও ফান্ড তৈরি করা যায় কিনা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন। ওই বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ। প্রতিমাসে তাদের বহু টাকার ওষুধ খেতে হয়। তাছাড়া ডাক্তার ফি, বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করতে গিয়েও বড় অংকের টাকা গুনতে হয়। মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। অনুদানের পরিমাণটা যাতে একটু বেশি করা যায় এবং সব সরকারি হাসপাতালে টেস্টগুলো যাতে ফ্রি করানোর ব্যবস্থা করা যায় সেজন্য নীতিমালা তৈরিতে নজর দেয়া যেতে পারে।