পঙ্কজকুমার দেব, হাফলং: অসমের হাফলং শহরের জনৈক দায়িত্ববান অটোরিকশা চালকের প্রত্যুৎপন্নমতিতে শিলচরের দুই নাবালিকা ছাত্রী পাচারচক্রের হাত থেকে বাঁচল। অন্যথায় নির্ঘাত কোনোও মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে সবকিছু খোয়ানো ছাড়া বিকল্প পথ থাকতো না। এতে অটোচালক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে শিলচরে খবর দেয় এবং পুলিশের মধ্যস্থতায় অসমের শিলচর থেকে আসা অভিভাবক পিতার হাতে দুই নাবালিকাকে তুলে দেওয়া হয়।
এঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শৈল শহর হাফলঙেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে নিউ হাফলঙে যাত্রীর সন্ধানে থাকা অটোরিকশা চালক ডেভিড জৌথে দুই কিশোরীকে অটোরিকশায় করে শহরে নিয়ে আসেন। তবে তাদের কাছে কোনো বৈধ পরিচয় পত্র বা নথি নাথাকায় হোটেলে ঘর পায়নি। তাছাড়া কিশোরীদ্বয়ের কথাবার্তা থেকে সন্দেহ হয়। ততক্ষণে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হয়। শিলচর থেকে কিশোরীদের অভিভাবকরা হাফলং এসে উপস্থিত হলে পুলিশ কিশোরীদ্বয়কে অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়।
অবশ্য এক্ষেত্রে অটোরিকশা চালক ডেভিড জৌথের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করেছেন।এব্যপারে পেশায় অটোরিকশা চালক তথা হাফলং অটোরিকশা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডেভিড জৌথে সাংবাদিকদের জানান যে গত সোমবার সকালে অন্যান্য দিনের ন্যায় অটোরিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় নিউ হাফলঙে বসে থাকার সময় দুই কিশোরীকে স্টেশনে ঘুরে দেখতে পান।জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে হাফলং টাউনে যাবে।
এভাবে যাত্রী হিসেবে ডেভিড দুই কিশোরীকে অটো করে নিয়ে আসার সময় তারা হোটেলে ঘর পাওয়া যাবে কি না এব্যপারে জানতে চায়। ডেভিড বলেন ‘ আজকাল হাফলঙে ট্যুরিস্টের আগমনের জন্য হোটেলে ঘর পাওয়া দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথাপি চেষ্টা করে দেখবো।’ কিন্তু হোটেল হয়নি। কারণ প্রথমত তারা নাবালিকা, দ্বিতীয়তে তাদের কাছে কোনো বৈধ পরিচয় পত্র নেই। ডেভিড জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে তাদের দিদিমা অসুস্থ। আজ তারা হাফলঙে রাত কাটাবে।
আগামীকাল মা এসে তাদের সঙ্গে নিয়ে গুয়াহাটি রওয়ানা হবে। তাদের কাছে পঁচিশ হাজার টাকা রয়েছে বলেও অটোরিকশা চালক ডেভিডকে জানায়। ততক্ষণে ডেভিডের সন্দেহ বাড়তে থাকে।তিনি সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দুই কিশোরীকে এভাবে শহরে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। তাই তিনি শহরের কাছে মৌলহৈ গ্রামে থাকা বাড়িতে নিয়ে যায়। তার বাড়িতে রাত কাটাতে পরামর্শ দেয় এবং মা এখান থেকে তাদেরকে নিয়ে যেতে পারবেন বলে দুই কিশোরীকে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে ফোন করলে শিলচর পুলিশের জনৈক আধিকারিক তুলেন। ডেভিড দুই কিশোরীর কথা বিশদ ভাবে জানান। পুলিশ বলেন তারা বাড়ি থেকে পালিয়েছে। এভাবে শিলচর পুলিশ হাফলং পুলিশকে খবর দেয়।
শেষ পর্যন্ত শিলচর থেকে অভিভাবকরা এসে সুকলমে কিশোরীদ্বয়কে সমঝে নেয়।দুই কিশোরী হাফলং সদর থানাতে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলে যে জনৈক যুবক তাদেরকে ট্রেন ধরে হাফলং আসতে বলে। তারা প্রথমে হাসিঠাট্টা ভাবলেও পরবর্তীতে দেখা যায় বিষয়টি সিরিয়াস। সঙ্গে টাকা পয়সা সোনা গহনাও আনতে বলে অন্যথা তাদের বাড়ির লোকদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এধরনের হুমকিতে তারা চলে আসতে বাধ্য হয়। তবে নিউ হাফলং আসার পর যুবককে না পেয়ে টাউনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে জনৈকা কিশোরীর বাবা সংবাদ মাধ্যমের কাছে তেমন কিছু খোলাসা করতে রাজি হননি। তিনি শুধু জানান যে তারা দুজনই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তাঁর বাড়ি শিলচরের ভকতপুরে। দুই কিশোরীর একজন তাঁর কন্যা।
দুই জনই রামানুজ গুপ্ত সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রী। তাই ঘটনাটি সম্পূর্ণ রহস্যাবৃত। প্রকৃতার্থে দুই কিশোরী অটোরিকশা চালককে দিদিমার অসুস্থতার কথা বললেও সংবাদ মাধ্যমের কাছে জনৈক যুবক আসতে বলেছে বলে জানায়। তবে পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করলে আসল প্রকাশ্যে আসবে।