শহর থেকে যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন উপড়ে ফেলা হয়েছে। পোস্ট অফিস এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হলো যুদ্ধের কামান!
আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে যুদ্ধের দুটি স্মৃতি ছিল। রবিবার সকালে আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকা থেকে দুটি কামান হঠাত্ করে তুলে নেওয়া হয়। কয়েকজন শ্রমিক দু’টি ক্রেন দিয়ে ট্যাংক তুলে ট্রাকে বোঝাই করেন। এরপরে এটি আগরতলার লিচুবাগান এলাকার আলবার্ট এক্কা পার্কে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালের স্মৃতিবিজড়িত সেই কামান এখন সেখানেই রাখা হবে।
আগরতলার প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত পোস্ট অফিস চৌমুহনীর গোল চত্বরেই রাখা ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কামান ও ট্যাংক।
রবিবার (১৫ নভেম্বর) হঠাত্ দুটি ক্রেনে করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়।
এই কামান বহু আগুন ইতিহাসকে বহন করে আসছিল। এটি হয়েছে ঐতিহ্যের স্থানাতর। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিবিজড়িত বিষয় এই কামান। এই কামানকে দেখলে জানতে পারতেন ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা।
অনেকেই আফশোস করে বলছেন যে শুধু এই কামনই ছিল কিন্তু এর আশেপাশে এর ইতিবৃত্তি উল্লেখ করা ছিল না। যা থেকে দেখে বা পড়ে মানুষ জানতে পারতেন এই কামানের ইতিহাস কী!
অনেকে আবার বিষয়টিকে ইতিবাচক দিক দিয়েও দেখছেন যে, এক্কা পার্কে নিশ্চয়ই এখন কামানের স্মৃতির বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে ভালোভাবে।
কামান স্থানান্তর নিয়ে রাজ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকার গোল চত্বর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সরিয়ে নেওয়ার এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে বিপ্লব দেব সরকার।
স্থানীয়রা আচমকা দেখেন, দুটি ক্রেনের সাহায্যে সামরিক অস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কামান এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে হারিয়ে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা ট্যাংক।
পরে পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডা. শৈলেশ কুমার যাদব নোটিশ জারি করে জানান, আগরতলা শহরের রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অস্ত্রগুলি পোস্ট অফিস থেকে সরানো হয়েছে। এগুলো আগরতলার লিচু বাগান এলাকার মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম শহীদ জওয়ান অ্যালবার্ট এক্কার নামে নির্মিত পার্কে স্থানাতর করা হয়েছে।
ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের এমন ঐতিহ্য স্থানান্তর সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে কংগ্রেস-সিপিআইএম।
প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র তাপস দে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ অবদান রয়েছে। আগামী প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাংলাদেশের জন্মের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর অবদান জানতে না পারে সে জন্য পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। এটি অন্যায়।
সিপিআইএম-এর ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক গৌতম দাস ধিক্কার দিয়ে বলেন, জনবহুল স্থানে রাখা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্থানীয় মানুষসহ বাইরে থেকে আসা মানুষ দেখছেন। এখান থেকে এই স্মৃতি সরিয়ে দেওয়ার মানে হচ্ছে ত্রিপুরার ঐতিহ্যকে নষ্ট করার অপচেষ্টা।
মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত স্মৃতি বহন করে বাঙালি বেঁচে আছে! কিন্তু আজ এই অপপ্রয়াস!
বাইরে থেকে যারা আগরতলায় আসেন, ঘুরে দেখেন এই স্মৃতিগুলো। এটি আগরতলার প্রতীক। তাই গত ৪৮-৪৯ বছর ধরে এই যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলি আগরতলার পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পোস্ট অফিস চৌমুহনী এলাকায় অবস্থিত কংগ্রেস ভবনটি মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনা জওয়ানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্ট অফিসের সামনের গোল চত্বরে শহীদ বেদী তৈরি করা হয়, পাশাপাশি কামান এবং ট্যাঙ্কটিও রাখা হয়। প্রত্যেক বছর বিজয় দিবসের দিন ভারতীয় সেনারা শহীদ সেনাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন এখানে।
আগামী মাসে বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। তার ঠিক এক মাস আগে শহরের উপহারগুলি শহরের কেন্দ্রবিন্দু থেকে উপড়ে ফেলা হল।
পোস্ট অফিস চৌমুহনী থেকে যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন উপড়ে ফেলা হয়েছে শুনে অনেকে অবাক ও হতবাক।
স্মার্ট সিটি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাঁদের মস্তিষ্কে এই ধারণাটি তৈরি করেছেন। প্রশ্ন উঠছে যারা এই ধারণাটি নিয়ে এসেছেন তাঁরা এই শহরকে কতটা জানেন?