আসাম নিউজ ডেস্ক: ১৯৬১ এর ভাষা আইন সুরক্ষায় সরব হয়েছিলেন প্রদীপ দত্ত রায়। প্রতিক্রিয়ায় দেশদ্রোহিতা সহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বিডিএফ প্রধান প্রদীপ দত্তরায়কে। আড়াই মাস পর গত মাসের শেষ সপ্তাহে গ্রাহ্য হল তাঁর স্থায়ী জামিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ প্রশাসন তথা সরকারের ভূমিকায় মুখর হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এক প্রেস বার্তায় ফ্রন্টের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন যে আমাদের বিচার ব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে । তাই এই রায় প্রত্যাশিত ছিল। এবং আমরা একশ শতাংশ নিশ্চিত যে আগামীতেও বিচার প্রক্রিয়ায় প্রদীপ দত্তরায় নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কারণ এই রায়ে বিচারক স্পষ্ট বলেছেন যে দেশদ্রোহিতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ব্যাপারে অভিযুক্তের জড়িত থাকার কোন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিচারক আরো বলেছেন যে সরকারের কোন পদক্ষেপকে সমালোচনা বা তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করার অধিকার সমস্ত নাগরিকদের সংবিধান সম্মত অধিকার যতক্ষণ অবধি না তাতে কাউকে সরকারের বিরুদ্ধে কোন হিংসাত্মক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে বা সেরকম কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ।
তেমনি যতক্ষন অবধি কার্যক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ কোন মৌখিক বা লৈখিক সমালোচনা আইনতঃ দন্ডনীয় হতে পারেনা। হৃষীকেশ দে বলেন যে এর থেকে স্পষ্ট যে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বিগত দিনে যেসব কথা বলেছেন তা সম্পূর্ণ সংবিধান সম্মত এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর গ্রেফতার সহ যেসব দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও ধিক্কারযোগ্য। তিনি বলেন যে হয়তো এর পেছনে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের চাপ ছিল কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সহ পুলিশ প্রশাসনের তরফে এই ব্যাপারে যে প্রতিস্পৃহামূলক আচরণ দেখা গেছে তা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
হৃষীকেশ আরো বলেন যে আমরা এটা আবারও স্পষ্ট করে দিতে চাই যে আমরা কোন জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নই। অসমের সমস্ত জাতিগোষ্ঠীর ভাষা সহ কৃষ্টি সংস্কৃতি আমাদের কাছে অত্যন্ত আদরনীয় ,সম্মানীয়। কিন্তু তা বলে কারো নায্য অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে তা আমরা মানিনা এবং ভবিষ্যতেও মানবনা। তাই বরাক তথা এই আসামের বাঙালি সহ কোন যে জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় আমরা সর্বদাই সোচ্চার থাকব।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের আরেক আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে প্রদীপ বাবুর এই জামিনে আবার সত্যের জয় সূচিত হল। তিনি বলেন আমরা নিশ্চিত যে আগামীতেও তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। জয়দীপ বলেন যে সরকারি কোনো পদক্ষেপের সমালোচনা বা প্রতিবাদ আমাদের সংবিধান সম্মত অধিকার। কিন্তু ইদানীং তেমন কেউ করলে বৃটিশ সরকার প্রনোদিত এবং অর্থহীন দেশদ্রোহী আইনের অপপ্রয়োগ করে সরকারি তরফে নাগরিকদের হেনস্থা করার প্রবণতা বাড়ছে যা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন এই ব্যাপারেই শিলচরের সাংবাদিক অনির্বাণ রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বপ্রনোদিত হয়ে ভুয়ো মামলা করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তাও প্রমাণিত তো হয়ইনি,উল্টে খোদ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা একজোটে তাঁর প্রতিবাদ করেছেন।
তিনি বলেন যে এইসব দমন পীড়ন করে গণতান্ত্রিক আওয়াজকে কখনো রুদ্ধ করা যায়না, ভবিষ্যতেও যাবেনা। এটা সরকার যত শীঘ্র বুঝতে পারে ততই মঙ্গল। তিনি আরো বলেন যে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠনের নেতারা যেভাবে সাম্প্রদায়িক বিবৃতি সহ বিভিন্ন বাঙালি প্রতিষ্ঠানের উপর চড়াও হয়েছিলেন তা নিঃসন্দেহে অসাংবিধানিক ও শাস্তিযোগ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি তরফে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকা পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজধর্ম পালনে ব্যর্থ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। জয়দীপ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী ও বিচারককে এই রায়ের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বিডিএফ সদস্য দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।