ঢাকা অফিস: আত্মীয় না হলে যোগ্যতা থাকলেও সহজে চাকরি পাওয়া যায় না, তবে আত্মীয় হলে শর্ত শিথিল করে হলেও চাকরি দেওয়া হয় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি)। আর এই ঘটনায় শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ।
শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সেকশন অফিসার হিসেবে চাকরি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়ার ছোট ছেলে হামিম আল রশীদ। হামিম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকলেও নিজের ছেলে হওয়ায় তাকে সেকশন অফিসার পদে চাকরি দেওয়া হয়।
ড. মো. শহীদুর রশীদ বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) থাকার সময় চাকরি পেয়েছেন তার বড় ছেলে আসাদুল্লাহ হিল কাফি। বর্তমানে তিনি ডেপুটি চিফ ফার্ম সুপারিনটেনডেন্ট পদে কর্মরত। উপ-উপাচার্য থাকাকালে তার ভাগ্নি সাজিয়া আফরিনও চাকরি পেয়েছেন। সাজিয়া আফরিন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের সেকশন অফিসার। নিজ পরিবার থেকে এভাবে একের পর এক চাকরি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, আগামী নভেম্বরে আমার মেয়াদপূর্তি হবে, যারা এখানে কম্পিটিটর (প্রতিযোগী) আছেন, নেক্সট টাইম যদি ভিসি হয়ে যাই, তখন তাদের তো সুযোগ থাকলো না। এ জন্য ওরা এখন দুর্নাম করছে। …যেহেতু আমার ঘুষ খাওয়া বা দুর্নীতির দোষ পায় না, তাই এখন বের করছে আত্মীয়ের চাকরি হয়েছে। আমি যখন অধ্যাপক ছিলাম আজ থেকে ১২ বছর আগে, তখন আমি ভিসিও না, প্রো-ভিসিও না, তখন আমার বড় ছেলে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছে। আমি যখন প্রো-ভিসি, তখন আমার বোনের মেয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস—সে কম্পিউটার শিখেছিল, ট্রেনিং দিয়েছিল, ওই সময় সে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ঢুকেছিল। আমি ওই সময় নিয়োগ বোর্ডের মেম্বারও ছিলাম না। এগুলো অনেক আগের কথা—একটা ১২ বছর আগে, একটা আট বছর আগে। এবার আমার ছেলে আবেদন করেছে, সে ব্র্যাক থেকে এমবিএ পাস করেছে, আশা ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করা। নিয়োগের শর্ত আগের মতোই আছে, এমন না যে আমি তার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করেছি। সে আবেদন করেছে, যেহেতু সে আমার আত্মীয়, ফলে আমি এই বোর্ডে থাকতে পারি না। তাই আমি আমার প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরকে বলেছি, এই বোর্ড সিলেকশন দিয়েছে অনেককেই।
বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান, উপাচার্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর থাকলে তা অপছন্দ করেন। কিন্তু তার (উপাচার্যের) ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেও চাকরি পেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, বাবার ক্ষমতা দেখিয়ে বর্তমানে ঠিকমতো অফিস না করার প্রবণতা রয়েছে বড় ছেলের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা থাকার কারণে খুব সহজেই চাকরি পেয়েছেন অনেকে। শিক্ষক নিয়োগে অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন ও জেনেটিক ব্রিডিং বিভাগে মো. আব্দুর রায়হান রাতুল প্রভাষক পদে সিজিপিএ ৩.৬৩ নিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তানজিনা আক্তারের সিজিপিএ ৩.৮৫ থাকলেও তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ রায়হান রাতুল বিশ্ববিদ্যালয়টির পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিন আব্দুর রাজ্জাকের সন্তান। তাই তাকেই নিয়োগ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মো. আব্দুর রায়হান রাতুল ২০১৩ সালে পোষ্য কোটায় (২৫ নম্বর পাওয়ার শর্ত) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। রাতুলের ছোট ভাইও একইভাবে পোষ্য কোটায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ডিন আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছেলের পয়েন্ট ছিল ৩.৮। তাছাড়া আমার ছেলের এমএস ডিগ্রি ছিল। আর যে মেয়েটির কথা বলছেন সে এমএস কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়ে ডিন আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার ছেলের চেয়ে কম পয়েন্ট নিয়ে অনেকেই ভর্তি হয়েছে। যারা অভিযোগ করেছেন তারা সে তথ্য দেয়নি। মিথ্যা তথ্য দিয়েছে হয়তো আমারই বন্ধুবান্ধবরা।