শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে স্বভাবসিদ্ধভাবে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি। তবে এদিন মোদি রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের যেভাবে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন, তাতে রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় সেটাই হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার মানুষের সামনে দিলীপকে “সাবাশি” দিয়েছেন তিনি। তবে কি একুশের নির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করলে মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন দিলীপ? সেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন দেখে নেওয়া যাক দিলীপের এই পর্যায়ে উত্থান কীভাবে হয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে ২০১৪ সালের আগে জড়িত ছিলেন না তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরের একটি গ্রামে দিলীপের জন্ম হয়। অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের সন্তান তিনি। ছাত্রজীবন শেষ করার পর তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেখানে যোগ দেন। সকলেই জানেন বিজেপির চালিকাশক্তি সংঘ পরিবার। এভাবেই পরবর্তীকালে গেরুয়া শিবিরের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি।
১৯৯৯-২০০৭ সাল পর্যন্ত সংঘের তরফে তিনি দায়িত্ব পান আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডের। সেখানে কাজ শুরু করেন নিজের মতো করে। ভয়ঙ্কর সুনামির কথা সকলেই জানেন। সুনামি আছড়ে পড়েছিল আন্দামানেও। সেইসময় আর্তের সেবায় দিনরাত এক করে দিয়েছিলেন দিলীপ। এভাবে সংঘের গুডবুকে নিজের নাম পাকা করে নিতে পেরেছিলেন তিনি। সংঘের তত্কালীন প্রধান কে সুদর্শনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বর্তমান রাজ্য বিজেপি সভাপতি। এরপর দিলীপের জীবনে নাটকীয় মোড় আসে। ২০১৪ সালে সংঘ থেকে তিনি সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাজ্য বিজেপির। ২০১৫ সালে রাহুল সিনহার পরিবর্তে দিলীপ রাজ্য বিজেপি সভাপতি নির্বাচিত হন। এখনও তিনি সেই পদেই বর্তমান। যদিও এত বড় পদ পাওয়ার পরেও দিলীপের চালচলনে সামান্যতম পরিবর্তন আসেনি। রাজ্য জুড়ে তিনি ছুটে চলেছেন প্রচারে। ২০১৬ সালে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন খড়্গপুর থেকে। সেই বিধানসভা নির্বাচনে তিনি হারিয়ে দেন সেখানকার কিংবদন্তী কংগ্রেস নেতা তথা দীর্ঘদিনের বিধায়ক প্রয়াত জ্ঞানসিং সোহনপালকে।
যিনি চাচা নামে পরিচিত রাজ্য রাজনীতিতে। এরপর গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্রে প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি হারিয়ে দেন তৃণমূলের ওজনদার প্রার্থী মানস ভুঁইয়াকে। তাঁর নেতৃত্বে সেই লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করে বিজেপি ১৮টি আসনে জিতে রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠে। অর্থাত্ দিলীপ ঘোষ মানেই পজিটিভিটি, এটা বিশ্বাস করতে থাকেন সবাই। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে দিলীপের জনসভায় ব্যাপক লোকসমাগম হচ্ছে। ভোর পাঁচটা থেকে তাঁর দিন শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত দলের কাজ করেন। অবিবাহিত দিলীপের পরিবার বলতে এখন যেন শুধুই বিজেপি। তাই নরেন্দ্র মোদি শনিবার দিলীপকে এত বড় সার্টিফিকেট দিতে দ্বিধা করেননি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় আন্দামানে যে লড়াই করেছিলেন তিনি, সেটা তিনি আজও করে চলেছেন গেরুয়া ব্রিগেডের হয়ে। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কিন্তু সবসময় প্রবল আত্মবিশ্বাস তাঁর চোখে মুখে ঝরে পড়তে দেখা যায়। তাই একুশের নির্বাচনে শেষ হাসি তিনি হাসবেন কিনা সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।