পঙ্কজকুমার দেব, হাফলং: ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ অনুসূচির অধীনে রয়েছে পার্বত্য ডিমা হাসাও জেলা। তাই এ জেলার জনগোষ্ঠীদের সিডিউল ট্রাইব হিলসে্র বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহির্জেলা থেকে সময়ে সময়ে সমতলীয় জনগোষ্ঠীরা হিলস ট্রাইবের ভুয়ো প্রমাণপত্র নিয়েই সরকারী চাকরী বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকার অভিযোগ ছিল। অবশ্য এহেন অভিযোগ নতুন নয়। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য থাকার বিপরীতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বিধানসভার সদন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে এবং তা ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়।
অসমের হাফলং গভর্নমেন্ট গার্লস এইচ এস স্কুলের জনৈকা বিষয় শিক্ষিকা ববিতা বরুয়া ইংতিপির নামে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ যে তিনি ২০০৬ সালে এপিএসসির বাছাই তালিকা মারফত এসটি (হিলস) ক্যাটাগরিতেই তাঁর বর্তমানের অসমীয়া বিষয় শিক্ষিকা পদের রেগুলেরাইজেশন হয়। উক্ত পদের সরকারী অনুমোদন নম্বর ১৫১/পিএসসি/ডিআর-৪৯/১/ ২০০৪-০৫, তারিখ ১২ জানুয়ারি,২০০৬। এমনকি ববিতা বরুয়া ইংতিপি অসমের গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল, এসটি হিলসের দৌলতেই করেছেন বলেও অভিযোগ। কারণ এম ফিল করতে সাধারণ ক্যাটাগরিতে ৫৫ শতাংশ মার্কসের প্রয়োজন যেখানে তাঁর রয়েছে ৫০ শতাংশ। তাই প্রশ্ন উঠছে যে তিনি কিভাবে নামভর্তি করলেন?
উল্লেখ্য, ববিতা বরুয়া ইংতিপি গভর্নমেন্ট গার্লস এইচ এস স্কুলের অসমীয়া বিষয়ের শিক্ষিকা। তিনি ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিযুক্তি লাভ করেন এবং ২০০৬ সালে এপিএসসি কর্তৃক এসটি হিলস ক্যাটাগরিতে চাকরি নিয়মিতকরণ হয়। আর এতেই নড়েচড়ে বসেছে ছাত্র সংগঠন ডিমাসা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন। কারণ বৈবাহিক সূত্রে নিজের ধর্ম বদল হলেও কাস্ট বদল সম্ভব নয়। তাহলে তা কি করে হলো ? এমনটাই প্রশ্ন জনৈক ছাত্র নেতার।
এ ব্যাপারে শিক্ষিকা ববিতা বরুয়া ইংতিপি বলেন ‘ আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পূর্ণ রটনা, ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। কারণ আমি কখনো এবং কোথাও নিজেকে এসটি হিলস বলে উল্লেখ করিনি। অনুরূপ ভাবে এমফিল ডিগ্রির বিষয়েও ববিতা বরুয়া ইংতিপির ভাষ্য হলো ‘ আমি কোনো ধরনের ক্যাটাগরির আশ্রয় নেইনি। নিজের প্রাপ্ত নম্বররের সাহায্যে এমফিলে নামভর্তি করে পাশ করি।’
তিনি আরও বলেন বৈবাহিক সূত্রে তাঁর স্বামীর পদবি কাস্টমারি লো ব্যবস্থার দ্বারা প্রদান করা হয়েছে যদিও কিন্তু সরকারী ক্ষেত্রে ব্যবহার করেননি।অবশ্য ববিতা বরুয়া ইংতিপি যদিও বলছেন যে তিনি এসটি হিলস ক্যাটাগরির সুবিধা নেননি তাহলে এপিএসসির বাছাই তালিকায় তাঁর নামের পাশে ক্যাটাগরি হিসেবে কেনো এসটি হিলস বলে উল্লেখ রয়েছে ? এমনকি তিনি নিজে গভর্মেন্ট গার্লস এইচ এস স্কুলের অস্থায়ী অধ্যক্ষা হিসেবে থাকাকালীন তাঁর স্বাক্ষরিত এক তালিকায় নিজেকে এসটি (হিলস) বলে উল্লেখ করেছেন। এহেন নানা প্রশ্নই এখন উত্থাপিত হচ্ছে।
এব্যাপারে ডিমাসা স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রমিত সেংগুইনের স্পষ্ট কথা হলো যে এধরনের কার্য কোনো দিন বরদাস্ত করবেন না। তিনি বলেন ‘ হাফলঙের জনৈকা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এসটি (হিলস) ক্যাটাগরিকে কাজে লাগিয়ে চাকরি নিয়মিতকরণের অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। তাই এহেন জালিয়াতি কার্যের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক এবং জনৈকা শিক্ষিকা দোষী হিসেবে প্রমাণিত হলে তাঁকে অতি শীঘ্রই চাকরি থেকে সাসপেন্ড করতে দাবি উত্থাপন করব । কারণ ভুয়ো এসটি (হিলস) প্রমাণপত্রের বিনিময়ে চাকরি করা অবশ্যই দণ্ডনীয় অপরাধ। যা আসল এসটি হিলসদের স্বার্থের পরিপন্থী।