আসাম নিউজ: আসাম চুক্তির ৬ নং ধারার বৈধতা নিয়ে উচ্চতম ন্যায়ালয়ে শুনানি চলাকালীন আসাম সম্মিলিত মহাসংঘের নিয়োজিত আইনজীবী বলেছেন যে অবৈধ প্রব্রজন তথা জন্মহারে আধিক্যের জন্য আসামে মুসলিম জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে ২০৪০ সালের মধ্যে এই রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হবেন।
এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন রাজ্যপাল কে পি সিনহার রিপোর্টের কথা আবার উল্লেখ করা হয়েছে।বাদী পক্ষের বিরুদ্ধে সওয়াল করলেই এই যুক্তিকে পুর্ন সমর্থন করেছেন কেন্দ্রীয় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এই বিষয়ে এবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এদিন বিডিএফ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে বর্তমানে সারা ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা ১৪ শতাংশ, আসামে মুসলিম জনসংখ্যা ৩০ শতাংশ মাত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার কমেছে।
জনজাতিদের ক্ষেত্রে জন্মহার সর্বাধিক। তারপরও এইসব অমূলক বক্তব্য রাখা হচ্ছে এবং কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধি তা সমর্থনও করছেন। তিনি বলেন প্রতিবার নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ভয় দেখিয়ে হিন্দুদের ভোট আদায় বিজেপির অন্যতম নির্বাচনী হাতিয়ার। এবারও সেই একই প্রয়াস চলছে। তিনি বলেন কে পি সিনহার যে রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে প্রতিদিন সীমান্ত পেরিয়ে অসংখ্য বাংলাদেশি আসামে ঢুকছে তা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে এন আর সি প্রক্রিয়ায় তাদের শনাক্ত করা গেল না কেন? তাঁরা কি উবে গেলেন?
প্রদীপ বাবু বলেন এসব অপপ্রচার চালিয়ে জনগনকে বোকা বানানোর দিন শেষ। এই রাজ্যের হিন্দুরা, বিশেষতঃ বাঙালি হিন্দুদের এই সরকারের আমলে যে অবস্থা আরো শোচনীয় হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
প্রদীপ দত্তরায় এদিন আরো বলেন যে বিজেপি সরকার যদি এতই হিন্দু দরদী হয়ে থাকে তবে কেন রাস্ট্রপতির সাক্ষর হবার পরও এতদিন ধরে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কার্যকর করতে অক্ষম? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি স্বত্ত্বেও ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেবার বদলে কেন নতুন করে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে, কেনই বা সেখানে ২০০০ বাঙালি হিন্দুকে আটকে রাখা হয়েছে?
কেন এন আর সি প্রক্রিয়া শেষ করে ১০ লক্ষ হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না, কেন তাঁদের আধার কার্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ? কেন বাঙালি হিন্দু প্রার্থীদের সরকারি নিয়োগে বঞ্চনা করা হচ্ছে ? তিনি বলেন এই সরকার আসলে হিন্দু নয় নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে ব্যাস্ত। তাই মেকী রাস্ট্রবাদের আড়ালে জাতিয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নই রাজ্যের বর্তমান বিজেপি সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন এর জবাব এই সরকারকে ব্যালটের মাধ্যমে পেতেই হবে, এটা নিশ্চিত।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরো বলেন যে সমষ্ঠি পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়ায় অনৈতিক ভাবে বরাককে বঞ্চনা করা হয়েছে। তিনি বলেন আসন্ন নির্বাচনের আগে বরাকের যে দুটি আসন কর্তন করা হয়েছে তা যদি আবার ফিরিয়ে দেওয়া না হয় তবে তা মেনে নেবেন না বরাক বাসী।
তিনি বলেন এই নিয়ে সারা উপত্যাকা জুড়ে ক্ষোভ রয়েছে। তাই আপাতত পূর্বাবস্থা বহাল রেখে আগামীতে সারা দেশের সাথে ,বর্ধিত জনসংখ্যার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমষ্ঠি পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এবং যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন পূর্বাবস্থা বহাল রাখার উদ্যোগ নিক সরকার। অন্যথায় যে কোন সময় বরাকবাসীর পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটলে তারজন্য সম্পুর্ন দায়ী থাকবে বর্তমান সরকার।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।