তৌহিদী হাসান: ‘সাধারণত গভীর রাতে (রাত তিনটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত) বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। তখন আমরা পরিবার নিয়ে বাংকারে চলে যাই। এই সময়টায় একটু ভয় লাগে। বাংকারে যাওয়ার সময় আগেই প্রস্তুত রাখা একটি ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে যাই। এর ভেতরে শুকনা খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা থাকে।’
কথাগুলো বলছিলেন ইউক্রেনপ্রবাসী বাংলাদেশি কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা এস এম কাদেরী কেশর। তিনি দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে বসবাস করছেন। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে কেশরের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন তাঁর ছোট ভাই এস এম কাদেরী সবু। সে সময় প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে কিয়েভের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলেন কেশর।
কেশর বলেন, তিনি কিয়েভ শহরে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করেন। সেখানে তাঁর কয়েকটি দোকান আছে। তাঁর স্ত্রী রাশিয়ার। তাঁদের একটি মেয়ে আছে। তাঁরা যে ভবনে আছেন, সেখান থেকে দেশটির পার্লামেন্ট ভবন পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাঝে একটি নদী আছে। নদীর পাড়ের একটি বহুতল ভবনে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। যুদ্ধ শুরুর ছয় দিনে তিনি মাত্র এক ঘণ্টার জন্য বাসার বাইরে গিয়েছিলেন। প্রতিদিনই দুই-চার ঘণ্টা পরপর তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে ভাই সবুর কথা হয়।
‘তিনি যেখানে আছেন, সেখানে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখেন। ১৬ তলা ভবনের তিন ভাগের দুই ভাগ বাসিন্দা ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছেন। তিনিসহ বেশ কয়েকটি পরিবার এখনো ওই ভবনে থাকছেন।’ – এস এম কাদেরী কেশর, ইউক্রেনপ্রবাসী বাংলাদেশি
কেশর বলেন, তিনি যেখানে আছেন, সেখানে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখেন। ১৬ তলা ভবনের তিন ভাগের দুই ভাগ বাসিন্দা ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছেন। তিনিসহ বেশ কয়েকটি পরিবার এখনো ওই ভবনে থাকছেন। প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে তাঁর ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। খাবারসহ কারও কোনো সহযোগিতা লাগলে দ্রুত তা পূরণ করার চেষ্টা করা হয় নিজেদের উদ্যোগে। তিনি গ্রামের দিকে যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, তিনি যে এলাকায় আছেন, সেখানে কোনো সামরিক স্থাপনা নেই। এ জন্য নিরাপদবোধ করছেন। গ্রামের দিকে যাওয়ার তাঁর ইচ্ছে নেই। কিয়েভ দখল হয়ে গেলেও তিনি পরিবার নিয়ে বাসাতেই থাকবেন।
কিয়েভের পরিস্থিতি নিয়ে কেশর বলেন, ইউক্রেনের সরকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দেশের বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনীও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সাধারণ মানুষ তাতে যোগ দিচ্ছেন। কিয়েভ শহরে গতকাল সোমবার দিনের বেলায় কারফিউ তুলে দেওয়া হয়। তবে রাত আটটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত এখনো কারফিউ বহাল থাকে। এ সময় সাধারণত কেউ বাইরে যান না।
কেশর জানালেন, খাবারের একটু সংকট রয়েছে। তবে ফোন করলে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ট্রেন-বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে খাবার রাখা হয়েছে। বাংলাদেশি অনেকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। এখন পর্যন্ত তাঁর জানামতে তাঁরা ভালো আছেন।