ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের কল্যাণ ভাতার পরিমাণ একেক দেশে একেক রকম। পার্থক্যটাও চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি জার্মানির একটি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এটি পরিচালনা করেন জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগের গবেষকেরা।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, আশ্রয়প্রার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভাতা দেয় ফ্রান্স আর সবচেয়ে কম দেয় হাঙ্গেরি।
ফ্রান্সে যারা আশ্রয় চেয়ে আবেদন করছেন, তারা প্রতি মাসে ৪২৬ ইউরো বা প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে পান।
এরপর অস্ট্রিয়া দেয় ৪২৫ ইউরো। যারা জার্মানিতে আশ্রয় আবেদন করেছেন, তারা প্রতি মাসে পান ৪১০ ইউরো (প্রায় ৪৮ হাজার টাকা)।
যুক্তরাজ্যে একজন আশ্রয়প্রার্থী প্রতি মাসে ২১০ ইউরো (প্রায় ২৫ হাজার টাকা) করে পান। সেখানে সুইডেনের বরাদ্দ ১৮০ ইউরো (প্রায় ২১ হাজার টাকা)। গ্রিসে সেটা আরও কম, ১৫০ ইউরো (প্রায় ১৭ হাজার টাকা)।
আর হাঙ্গেরিতে একজন আশ্রয়প্রার্থীর জন্য মাসিক বরাদ্দ মাত্র ৬০ ইউরো (প্রায় সাত হাজার টাকা)।
সমীক্ষায় ইউরোপের নয়টি দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোতে নিজেদের নাগরিক ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সরকারের বরাদ্দের পরিমাণ এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
ভেল্ট অ্যাম জনটাগ সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ডানিয়েল টিম বলেন, বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সামাজিক সুবিধা দিচ্ছে জার্মানি। আর যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।
তবে ফ্রান্সে যাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়, তাদের অর্থ দেওয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়। তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রান্স ছেড়ে চলে যেতে চাপ দেওয়া হয়।
রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটদের অনুসারী ডানপন্থি সিএসইউ এই সমীক্ষায় দৃষ্টি দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। তারা মনে করে, ক্রমবর্ধমান আশ্রয়প্রার্থী ও অনিয়মিত অভিবাসীদের সামাল দিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর লড়াইয়ের চিত্র উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়।
পার্লামেন্টে সিএসইউ’র প্রধান আলেকজান্ডার ডব্রিন্ট দাবি করেছেন, এই প্রভাব কমাতে হবে এবং ইউরোপজুড়ে আশ্রয়ের সুবিধাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। ইউরোপে অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে জার্মানি যেন মূল আকর্ষণ হয়ে না ওঠে।
অভিবাসন এবং আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়গুলো কীভাবে পরিচালনা করা যায়, সেই প্রশ্নে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে মতবিরোধ রয়েছে।
অবশ্য বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা ইউরোপের অভিন্ন অভিবাসন ও আশ্রয়নীতি গত ৮ জুন আলোর মুখ দেখেছে। সেদিন লুক্সেমবার্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইন অনুমোদন করে সেই বোঝাপড়া কার্যকর করার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী বছর ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগেই সেই আইন পাস করার দিকে মনোযোগী ইউরোপীয় নেতারা।
তবে অভিন্ন এই নীতি কার্যকর হলে বিপদে পড়তে পারেন বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া, সেনেগাল, পাকিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীরা৷ কারণ, নতুন নিয়মে আশ্রয় আবেদনগুলো ইইউর বহিঃসীমান্তেই নাকচ হতে পারে। আবার যারা ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে ঢুকতে পারবেন, তাদেরও অন্য দেশে স্থানান্তরিত করা যাবে।
নতুন নীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয়প্রার্থীদের বোঝা সব দেশ মিলে ভাগ করা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটভুক্ত যে দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অনীহা দেখাবে, সেই দেশকে অভিবাসীপ্রতি ২০ হাজার ইউরো দিতে হবে। অবশ্য, এর তীব্র বিরোধিতা করছে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি।