শিরোনাম
বৃহঃ. ডিসে ৪, ২০২৫

ইফতার মাহফিল বন্ধের প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতার

ঢাকা, ১২ মার্চ: রমজানে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-পড়শি সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য। ইফতার মাহফিলগুলোতে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির চর্চা ও নসিহতমূলক আলোচনা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান ডামি সরকার ইফতার মাহফিলের ব্যাপারে নোয়াখালী ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোথাও কোথাও দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেছে। অথচ ইফতার মাহফিল জনগণের সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার।

যাইহোক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেছে ও পালন করার ডাক দিয়েছে।

গণ-ইফতার কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন করা হয়েছে ও পালন করার ডাক দিয়েছে।

রমজানের প্রথম দিন ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণ-ইফতার কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার পরপর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় সামাজিক মাধ্যমে। পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদে শামিল হন। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পায়রা চত্বরে এই গণ-ইফতার আয়োজন করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইন্সটিটিউটের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শিক্ষার্থীরা আসরের নামাজের পর থেকেই একে একে জড় হতে থাকে। এরপর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কুরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত ও ইসলামি বিভিন্ন পরিবেশনা করতে থাকে। এরপর তারা ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞার জবাবে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান বলেন, দেশের দুটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ক্যাম্পাসে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ইফতার পার্টি নিষিদ্ধ করেছে। তারা দেশ থেকে ইসলামী সংস্কৃতিগুলো বাদ দিতে পাঁয়তারা করছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

দুই ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় জবিতে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী‌রা ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করলে তাতে বাধা প্রয়োগ করে জবির প্রক্টোরিয়াল বডি। বেলা ২টায় বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিলটি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাতে বাধা সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা ওই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলব, তারা যেন তাদের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। আশা করি আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেয়। ইফতারে অংশ নেওয়া সৌরভ নামের এক সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রতি বছরই রমজানে বন্ধুদের সাথে ইফতার করি। আমি মনে করি একটি অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ করার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে ধর্মীয় রীতিনীতি সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখা।

এদিকে বুধবার (১৩ মার্চ) রমজানের দ্বিতীয় দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ সাধারণ শিক্ষার্থী এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। চবির ফিন্যান্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইসতিয়াক হোসেন মজুমদার বলেন, কতিপয় দ্বিমুখী চরিত্রের বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তারা ঘটা করে বিভিন্ন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুষ্ঠান আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করলেও রমজানের ইফতার পার্টির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। অথচ তারা সবসময় অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন।

অন্যদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গোলচত্বরে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *