- পাটের বান্ডিলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে এলো ২৯০ কেজি ইলিশ।
পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: খারাপ আবহাওয়ার জেরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ ছাড়া উপকূলে ফিরছেন পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবী ট্রলার। ইলিশ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অন্য মাছ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের।
এতে বড়সড়ো প্রভাব পড়তে পারে ইলিশের দামে, এমনটা মনে করা হচ্ছে। তার ওপর নদী এবং সমুদ্রের উত্তাল অবস্থা ক্রমশ বাড়ছে। কয়েকদিন আগে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে ট্রলার থেকে পড়ে এক মৎস্যজীবী গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যায়। যার খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে একপ্রকার বুকে ভয় নিয়ে মৎস্য বন্দরের দিকে ফিরতে শুরু করেছে ট্রলারগুলি।
কয়েকদিনের মধ্যে সব ট্রলার উপকূলে ফিরে আসবে বলে জানিয়েছেন, রাজ্যটির দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কাকদ্বীপ অঞ্চলের মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র। তিনি জানিয়েছেন, আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় মৎস্যজীবীরা তাড়াহুড়ো করে গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য বন্দরে ফিরতে শুরু করেছে।
তবে এখনও সমুদ্রে পর্যাপ্ত ইলিশ আছে বলে, মনে করছেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু, আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে সেই মাছ ধরা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে মৌসুমের মাঝখানে ইলিশ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হবে তা ভাবতে পারছেন না কেউই।
উল্লেখ্য, এক একটি ট্রলার সমুদ্রে পাঠাতে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ রুপি খরচ করতে হয়। সেই অর্থ না উঠলে আগামীদিনে ট্রলার সমুদ্রে আবার পাঠাবে কিনা তার চিন্তা করছেন ট্রলার মালিকরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গে বাংলার ইলিশের দাম যে বাড়তে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
জানা যায়, বিশ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের উৎপাদনে ৮০ হাজার টন থেকে নেমে এসেছে ১১ হাজার টনে। সরকারি উদাসীনতা এবং অতিমাত্রায় জাটকা ইলিশ ধরাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। যে কারণে, রাজ্যবাসীকে ভারতের গুজরাট আর মিয়ানমারের ইলিশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
তবে এরই মধ্যে রাজ্যের মৎস্য ব্যবসায়ীদের আশার আলো দেখাচ্ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। জানা গেছে, বিগত বছরগুলোর মত চলতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিতে চলেছে বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। যা আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে।
গত বছর ২৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫০ টন ইলিশ আনতে পারবে বলে জানিয়েছিল, বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে বছর রপ্তানি চালু ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
তারও আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৬০০ মেট্রিক টন ইলিশ আসার কথা থাকলেও, সেবার সময় পার হওয়ার কারণে ভারতে এসেছিল ১২০০ মেট্রিক টন। যে কারণে, ওই বছর ইলিশের আকাল দেখা গিয়েছিল। বাজার ঘুরেও মেলেনি বাংলাদেশের ইলিশ।

পাটের বান্ডিলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে এলো ২৯০ কেজি ইলিশ
বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসা ৩২৫ কেজি পদ্মার ইলিশ উদ্ধার করল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ ঘটনায় পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অবৈধভাবে ইলিশ পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম নিতাই মণ্ডল। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি থানা এলাকার বাসিন্দা। দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের অধীনে ৮ ব্যাটালিয়নের সীমান্ত চৌকি মাহিন্দ্রার বিএসএফ সদস্যরা এ বিপুল পরিমাণ ইলিশ জব্দ করে ও পাচারকারীতে পুলিশে সোপর্দ করে।
জব্দ হওয়া ইলিশের ভারতীয় মুদ্রায় বাজারমূল্য ৫ লাখ ২০ হাজার রুপির বেশি। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিএসএফ।
তারা জানিয়েছে, দুই ধাপে উদ্ধার হয়েছে মোট ৩২৫ কেজি পদ্মার ইলিশ। প্রথমে নৌকায় পাটের বান্ডিলের ভেতর পাওয়া যায় ২৯০ কেজি। অপর স্থান থেকে মিলেছে ৩৫ কেজি ইলিশ।
জানা যায়, শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) অন্যান্য দিনের মতো মুর্শিদাবাদের মাথাভাঙা নদীর সীমান্ত এলাকায় স্পিড বোটে টহল দিচ্ছিলেন বিএসএফ সদস্যরা। স্থানীয় সময় বিকেল ৩ টার দিকে তাদের চোখে পড়ে একজন মাঝি বাংলাদেশ সীমানা থেকে কাঁচা পাটের বান্ডিল বোঝাই করা নৌকা নিয়ে আসছেন। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ব্যক্তিটির কথায় একাধিক অসঙ্গতি মিললে তার সঙ্গে থাকা পাটের মধ্যে কী আছে, দেখতে চায় বাহিনী।
সার্চ করে পাটের বোঝাইয়ের মধ্যে থরে থরে সাজানো ১৬টি প্লাস্টিকের বস্তায় উদ্ধার হয় পদ্মার ইলিশ। প্রতি ইলিশের আনুমানিক ওজন প্রায় এক কেজি। সব মিলিয়ে ১৬টি বস্তায় উদ্ধার হয় ২৯০ কেজি ইলিশ।
বিএসএফের দাবি, মাছগুলো পদ্মা নদী থেকে ধরা। সেটা পাচার হয়ে আসছিল পশ্চিমবঙ্গে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার নিতাই জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে চারজন তার হাতে এক হাজার রুপি দিয়ে তাকে বলেছিল, ওই পাটের বান্ডিল নদী পেরিয়ে ভারতে নিয়ে যেতে। এবং সীমান্ত পেরিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার তালতলী গ্রামের বাপন মণ্ডলের কাছে হস্তান্তর করতে। তিনি সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন। পাটের বান্ডিলের ভেতরে মাছ আছে, তা তার জানা ছিল না বলে বিএসএফকে জানিয়েছে নিতাই। নিতাইয়ের দেওয়া তথ্য মতে পাচারকারীদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
অপরদিকে, অন্য একটি ঘটনায়, বর্ডার পোস্ট ফারজিপাড়া, অ্যাডহোক -১০ কোরের সীমান্তরক্ষী সদস্যরা তাদের দায়িত্বের এলাকা থেকে ৩৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেছে।
এনিয়ে বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেছেন, এক সপ্তাহে দুটি ইলিশ পাচারের ঘটনা রুখে দিল বিএসএফ। বাংলাদেশ থেকে মাছের এই বিশাল মাছের চালান ভারতে আনার চেষ্টা করছিল চোরাকারবারিরা। চোরাচালান ঠেকাতে আমরা বদ্ধপরিকর আমরা।