- পশুখাদ্য খেতেও বাধ্য হচ্ছে গাজার মানুষ
আর্ন্তজাতিক নিউজ ডেস্ক: ইসরাইলি বর্বর হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজারে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬৬ হাজার মানুষ।
তার্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৬ হাজার ৯০০ জনে পৌঁছেছে। নির্বিচার এই মারাত্মক ইসরাইলি আক্রমণ ১১৭তম দিন পার করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, হামলায় আরও ৬৫ হাজার ৯৪৯ জন আহত হয়েছেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ১৬টি ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে। যার ফলে ১৫০ জন নিহত এবং আরও ৩১৩ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে… এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না বলেও এতে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এ হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
মাঝে হামাসের সঙ্গে এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক বিরতির পর গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। বিরতির পর শুরু হওয়া এই অভিযানে গাজায় হামলা আরও তীব্র করেন দখলদার সেনারা।
আনাদোলু বলছে, ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
পশুখাদ্য খেতেও বাধ্য হচ্ছে গাজার মানুষ
ইসরাইলি হামলার মুখে গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপ হচ্ছে। মানুষ খেতে পাচ্ছে না, শিশুরাও অভুক্ত, সদ্যোজাতেরাও যথাযথ সুরক্ষা পাচ্ছে না। খুবই মর্মান্তিক পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতি নিয়ে ঘোর উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা ‘হু’ও। এর আগে গাজায় মানুষের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা ‘হু’ বলছে, ফিলিস্তিনির গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে খাবারের ব্যাপক সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও সেখানে তারা খাবার সরবরাহ করতে পারছে না। নানা রকম অসুবিধা সেখানে। তল্লাশি কেন্দ্রগুলোতে বিলম্বের ফলে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহের পর এক ত্রাণকর্মী বলেন, খাবার নিতে আসা মানুষের ভিড়ে দুজনকে দেখলাম দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রচুর লোকজনের ভিড়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ওই এলাকায় খাদ্য সরবরাহও তেমন করা যায়নি।
মৃতদের নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ইসরাইলি বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া ফিলিস্তিনিদের লাশ দাফনে সময়ে এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এরা (মৃতেরা) কোথায় আহত হয়েছিলেন, এদের নাম-পরিচয়ই বা কী, সেসব কিছুই আমরা জানি না!
রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিসের আল-আমল হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। এখন তারা চিকিৎসকদের এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছাড়তে বলছে।
২০০৫ সালে ইসরাইল একতরফাভাবে গাজা থেকে তাদের সেনাবাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে ১৯৬৭ সাল থেকে তাদের দীর্ঘ অবস্থানের অবসান হয়। তবে সেনাবাহিনী সরিয়ে নিলেও গাজা সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে থেকে যায়। গত ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে ইসরাইল সরকার গাজার মানুষদের উৎখাত করা বা গাজা উপত্যকায় ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি।