- ইন্ডিয়া থেকে যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল বাংলাদেশ।
লন্ডন, ১৬ এপ্রিল: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। মুসলিম বিশ্বের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বিবেকবান মানুষ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে ইসরায়েল ও তার মিত্র ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য বর্জনের ডাক দিচ্ছেন। বয়কটের আওতায় থাকা এমন অনেক ব্র্যান্ড রয়েছে, যেগুলো প্রতিদিনের জীবনযাত্রার সঙ্গে অতপ্রতভাবে জড়িত। তবুও ধর্ম, মানবতা এবং সংহতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এসব পণ্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বব্যাপী অসংখ্য সচেতন নাগরিক।
বিশ্বের অমুসলিম শক্তি যখন মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে লিপ্ত, তখন বিশেষভাবে আল-আকসা ও ফিলিস্তিনের প্রতি ইঞ্চি মাটি ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে। নিরীহ নারী ও শিশুদের রক্তে সিঞ্চিত হচ্ছে প্রতিটি বালুকণা। বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিস্তৃত এলাকা। ইসলামিক স্কলাররা বলছেন, চলমান এই সংকটে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে মুসলিমদের করণীয় হলো—ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের সম্পূর্ণরূপে বয়কট করা এবং সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা। বয়কটের তালিকায় প্রযুক্তি থেকে খাদ্য—সবই। বয়কটের এই উদ্যোগকে আরও সংগঠিত করতে ‘দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন’ নামক একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করেছে ইসরায়েল-সম্পৃক্ত ব্র্যান্ডগুলোর একটি দীর্ঘ তালিকা। এই তালিকায় রয়েছে প্রযুক্তি ব্র্যান্ড থেকে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও।
বয়কটের আওতায় রয়েছে—
– অ্যাপল: মার্কিন বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি, যাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে ইসরায়েলে।
– অ্যামাজন: ইসরায়েলের সঙ্গে অংশীদারিত্বে থাকা আরেক মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট।
– এরিডাস: ইসরাইলে ব্যবসা পরিচালনা করছে এই জনপ্রিয় জুতা কোম্পানি।
– কোকা-কোলা: ইসরাইলের দখল করা ফিলিস্তিনি ভূমিতে কারখানা স্থাপন করেছে।
– ম্যাকডোনাল্ডস: ইসরাইলি সেনাদের জন্য খাবার সরবরাহ করে আসছে।
– ইউনিলিভার: ইসরাইলে পণ্য বিক্রি ও ব্যবসা পরিচালনার কারণে তালিকাভুক্ত।
– ন্যাসলে: ইসরায়েলি ফুড কোম্পানি ‘ওসেম’-এর ৫৩.৮% মালিকানা তাদের হাতে।
– পেপসিকো: ইসরাইলি কোম্পানি ‘সোডাস্ট্রিম’-এর সঙ্গে ব্যবসায়িক ইতিহাস রয়েছে।
– লোরিয়াল: ইসরাইলের সঙ্গে সক্রিয় ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।
– হুন্ডাই, ফিলিপস ও স্যামসাং: এসব কোম্পানি ইসরাইলের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রযুক্তি ও পণ্য সরবরাহ করে আসছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কয়েকশ ব্র্যান্ড রয়েছে এই তালিকায়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও সংহতির প্রতীক হিসেবে এসব ব্র্যান্ডকে বর্জন করছেন বিশ্বের মুসলিম জনগণ এবং বিবেকবান অমুসলিমরাও। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি আবেগ নয়, বরং মানবতার পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান। তারা মনে করেন, সুসংগঠিত ও তথ্যভিত্তিক বয়কট হতে পারে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিবাদের ভাষা।
– ইন্ডিয়া থেকে যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল বাংলাদেশ
ইন্ডিয়া থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ। এই নিষেধাজ্ঞায় নেপাল ও ভুটানেরও কিছু পণ্য রয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে টানাপোড়েনের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ। গত রোববার প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস উইং। মঙ্গলবার এ তথ্য জানায় এনবিআর। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে ইন্ডিয়ায় আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অদৃশ্য টানাপোড়েন চলছে। এর প্রভাব পড়ছে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। এরই মধ্যে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ইন্ডিয়া সরকার। ২০২০ সালের ২৯ জুন ইন্ডিয়া এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছিল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে সহজেই পণ্য পাঠাতে পারত। এখন এই সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। অর্থাৎ ইন্ডিয়ান বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্ট করতে পারবে না। তবে নেপাল-ভুটানে স্থলপথে ট্রানজিট নিয়ে পণ্য পাঠানোয় জটিলতা থাকছে না। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত এবং প্রক্রিয়াজাত সুতা ও আলু ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানি করা যাবে।
ইন্ডিয়া থেকে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া পণ্যগুলো হলো-
ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিক্স।
তবে মূসক নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল হিসেবে তামাক ডাঁটা আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে আগে জারি করা এসআরও নং ২৯৭-আইন/২০২৪/৮৯/কাস্টমস প্রজ্ঞাপনটির কয়েকটি ক্রমিক নম্বর সংশোধন করা হয়েছে। এতে পণ্য তালিকার হালনাগাদ করা হয় এবং ‘সব রপ্তানিযোগ্য পণ্য’ আগের মতোই অব্যাহত রাখা হয়েছে।