বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের প্রবীণ অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার এটিএম শামসুজ্জামানের প্রয়াণে তাকে ঘিরে স্মৃতিচারণ করলেন দীর্ঘদিনের সহশিল্পী, নির্মাতা ও অনুজপ্রতিম শিল্পীরা।
চার শতাধিক চলচ্চিত্রের বহু খল ও কমেডি চরিত্রকে অমর করে যাওয়া এই অভিনেতার মৃত্যুর খবরে শনিবার সকাল থেকেই তার সূত্রাপুরের বাসায় ভিড় করছেন সহশিল্পী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
শেষবারের মতো তাকে দেখতে এসে তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করে আসা অভিনয়শিল্পী আনোয়ারা সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি যেহেতু খল চরিত্রে অভিনয় করতেন, অনেকেই তাকে খারাপ মানুষ মনে করতেন। এটিএম শামসুজ্জামান মানুষ হিসেবে অনেক ভালো ছিলেন। আর অভিনেতা হিসেবে ছিলেন অসাধারণ।”
ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এ প্রবীণ অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রাজ্ঞজনদের একজন তিনি। তবে এতো সহজ মানুষ ছিলেন, যার সাথে সবকিছু অকপটে বলা যেত। সর্বদা সুপরামর্শ পেয়েছি এই গুণী মানুষটির কাছ থেকে। সবকিছু ছাপিয়ে এটিএম আঙ্কেল ছিলেন অত্যন্ত রসবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ।
“শুধু সিনেমায় নয়, ব্যক্তিজীবনেও দারুণ হিউমার সম্পন্ন মানুষ ছিলেন তিনি। রঙের মানুষ, মুহূর্তেই আসর জমিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু একই সঙ্গে আবার অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান।”
দীর্ঘ ছয় দশকের ক্যারিয়ারে অভিনয়ের জোরেই নিজের নামটিকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পেরেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। তবে তিনি ছিলেন একাধারে পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। তার লেখা চিত্রনাট্যের সংখ্যা শতাধিক।
অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননার পাশাপাশি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এটিএম শামসুজ্জামান ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
তিনি যে কয়টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তার একটি ‘চোরাবালি’। ছবির পরিচালক রেদোয়ান রনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “কত কথা মনে পড়ছে আজ। গাজীপুরের এক বাগান বাড়ীতে ‘চোরাবালি’র সেটে ঢুকেই আমাকে ধমকাধমকি শুরু করলেন। সেটাই তার সাথে আমার সম্পর্কের শুরু, বলতে পারি বন্ধুত্বের শুরু।
“ডাবিংয়ে এসে ফুটেজ দেখে হাত ধরে আমাকে কত যে আবেগঘন কথা বললেন। যেদিন সিনেপ্লেক্সে প্রথম পুরো ছবিটা দেখেন তারপর থেকে আমাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে যায়। মাঝে মধ্যেই আড্ডা হত, তর্ক হত, হত হাসাহাসি । মনেই হত না তার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য আকাশ পাতাল। সব বয়সের মানুসের বন্ধু হয়ে যেতেন।”
এটিএম শামসুজ্জামানকে শেষবারের মতো দেখতে তার বাসায় ছুটে এসেছিলেন ছোটপর্দার অভিনেতা মীর সাব্বির।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নোয়াশাল’ নাটকে আমরা দীর্ঘ আট বছর কাজ করেছি। আমার সুযোগ হয়েছে তার সঙ্গে অভিনয় করার। তিনি আমার কাঁধে হাত রেখেছেন, আমার পরিচালনায় অভিনয় করেছেন। তাকে নিয়ে আমার কথা বলার যোগ্যতা নাই। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।”
আসরের পর জানাজা শেষে এটিএম শামসুজ্জামানকে জুরাইন কবরস্থানে তার বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীরের পাশে সমাহিত করা হবে সালেহ জামান।