আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: আজমীর শরীফ খ্যাত বিখ্যাত সুফি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) এর মাজারকে এবার মন্দির ও তাজমহলে উরস বন্ধের দাবি করলো ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মহারানা প্রতাপ সেনা নামের এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) এর মাজারটিকে মন্দির দাবী করে পদযাত্রার ঘোষণা দেয়। সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, মহারানা প্রতাপ সেনা নামের এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল দাবি করে যে, রাজস্থানের আজমীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক দরগাহটি মূলত একটি হিন্দু মন্দির। ঐতিহাসিক কালে তাদের এক হিন্দু দেবতার জন্য এটিকে উৎসর্গ করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে একে মুসলিম দরগাহতে রূপান্তর করা হয়।
দলটির নেতারা তাদের দাবির স্বপক্ষে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, কিছু ঐতিহাসিক বর্ণনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানকে যুক্তি ও প্রমাণ স্বরূপ সামনে নিয়ে আসে। যদিও তাদের উপস্থাপনকৃত এসব ঐতিহাসিক বর্ণনা ও যুক্তিপ্রমাণ মূলধারার ঐতিহাসিকদের দ্বারা বহুকাল আগেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, এরপরও তারা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি নিজেদের দাবীতে অনড় থেকে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও মুসলিম আধ্যাত্মিক গন্তব্য হিসেবে পরিচিত এই দরগাহ অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেয়।
আজমীর শরীফ খ্যাত বিখ্যাত সুফি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) এর মাজারের অভিভাবকগণ দরগাহকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মন্দিরের দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের ভাষ্যমতে, এই দরগাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী ঐক্য ও বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। দরগাহ অথবা দরগাহ সংলগ্ন পরিবেশ পাল্টে ফেলার চেষ্টা ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না। দেশের সামাজিক কাঠামোতে এর প্রভাব ও পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী।
অপরদিকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দরগাহ অভিমুখে পদযাত্রা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় দরগাহ কর্তৃপক্ষের বিবৃতি আসায় সতর্ক অবস্থানে থাকার ঘোষণা দেয় রাজস্থানের স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন। আহবান জানায় সকলকে শান্ত পরিবেশ ও সম্প্রীতি বজায় রাখার। যেকোনো ধরণের সহিংসতা এড়াতে মোতায়েন করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী।
এদিকে প্রতি বছর ৬-৮ ফেব্রুয়ারি শাহজাহানের উরস পালিত হয় তাজমহলে। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের মৃত্যুদিবস পালন উপলক্ষ্যে এই উরস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। চলতি বছরে মুঘল সম্রাটের ৩৬৯তম উরস পালিত হবে। কিন্তু, তার তিনদিন আগে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আগ্রা সিভিল কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছে। সেখানে তারা এই উরসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে এই উরসকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ যেভাবে তাজমহলে জমায়েত করে তারও তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা নামে ওই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি এই পিটিশন দাখিল করেছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছে। ৪ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
সংগঠনটির মুখপাত্র সঞ্জয় জাট তথ্য জানার অধিকার আইনে এএসআইয়ের থেকে তথ্য চেয়েছিলেন যে, শাহজাহানের উরস পালন করার জন্য পরবর্তী মুঘল সম্রাটরা বা ব্রিটিশ সরকার বা ভারত সরকারের তরফে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিনা। উত্তরে এএসআই জানায়, এই ধরনের কোনও অনুমতি উরস আয়োজক কমিটিকে দেওয়া হয়নি। আর এরপরই অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন জানানো হয় এই উরস বন্ধ করার জন্য। এই প্রসঙ্গে হিন্দু মহাসভার সভাপতি মীনা দিবাকর ও জেলা সভাপতি সৌরভ শর্মা জানান, এএসআই-এর সৌধগুলিতে যখন কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় না, তখন তাজমহলে এই ধরনের উরস অনুষ্ঠান ‘বেআইনি’। তাঁরা আরও জানান, শীঘ্রই তাঁরা তাজমহল চত্বরে একটি সার্ভের জন্য পিটিশন দাখিল করার কথা ভাবছেন, যেমনটা জ্ঞানভাপী ও মথুরা মসজিদে করা হয়েছে।
যদিও এই প্রসঙ্গে উরস আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম জাইদি বলেন, কয়েক শতক ধরে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের উরস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর এএসআই এই অনুমতি দিয়ে আসছে। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁর আরও দাবি, এই ক’দিন আগেও এএসআই অফিসে একটি বৈঠক হয়েছিল। কীভাবে উরস পালিত হবে তা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য, উরস উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এই তিনদিন তাজমহলে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ মেলে। যদিও জানা গিয়েছে, হিন্দু মহাসভা মামলা করলেও এবার শাহজাহানের উরস পালনে কোনও বাধা দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবছর যেভাবে এখানে উরস পালিত হয়, চলতি বছরেও ৬-৮ ফেব্রুয়ারি সেভাবেই উরস পালিত হবে।