আইন আদালত প্রতিবেদক, ঢাকা: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মনির্ভর কনটেন্ট প্রকাশ ও পরিবেশনে তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ে একটি নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া হাই কোর্টে দাখিল করেছে।
বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চে এই নীতিমালা জমা পড়ে।
এর আগে গত ১৩ জুন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও একটি খসড়া নীতিমালা জমা দিয়েছিল। সেই নীতিমালা হালনাগাদ করতে সরকার পক্ষ সময় চাইলে আদালত আগামী ২৯ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ঠিক করে দেয়।
বিটিআরসির পক্ষে ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এবং রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ শুনানিতে ছিলেন।
পরে রেজা-ই-রাকিব বলেন, “আমরা আমাদের খসড়া চূড়ান্ত করে আদালতে দিয়েছি। আদালত আগামী ২৯ নভেম্বর শুনানির জন্য রেখেছে।”
তিনি সাংবাদিকদের জানান, তারা এই খসড়াটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে ভেটিংয়ের জন্য এটি যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। ভেটিংয়ের পর গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ সব অগ্রগতিও তারা আদালতকে জানাবেন।
ওটিটিনির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন রোধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’ চ্যালেঞ্জ করে গত বছর ১২ জুলাই হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
ওইসব প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ-তদারকিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয় সেখানে।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছর ১৫ জুলাই আদালত ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ কনটেন্ট সরাতে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়, পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।
সেই সঙ্গে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে দেশে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট’ পরিবেশনের বিষয়ে অনুসন্ধান করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। তখন আদালত বলে দেয়, এরপর রিট আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে উপস্থাপন করতে হবে। সে অনুযায়ী গত বছর অগাস্টে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর শুনানির পর আদালত রুল জারি করে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সেই সঙ্গে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তদারকির জন্য নীতিমালা প্রণয়নে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য সচিব, সংস্কৃতি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ আট বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী তানভীর আহমেদ এর আগে একটি দৈনিকে প্রকাশত তথ্যের বরাতে বলেছিলেন, নেটফ্লিক্স বছরে ১৮০ কোটি টাকা আয় করে বাংলাদেশের গ্রাহকদের কাছ থেকে। এরকম প্ল্যাটফর্ম এখন অনেকগুলো আছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারছে না।
এছাড়া ওটিটিতে প্রচারিত অনেক কন্টেন্ট বাংলাদেশের ‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না’ বলে নীতিমালা প্রয়োজন বলে এই রিট আবেদন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।