দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার বোড়াল মহাশ্মশানঘাটে আনা ১৩টি মৃতদেহের সৎকার নিয়ে তুলকালাম ঘটেছে।
গত বুধবার দুপুরে কলকাতা পৌর করপোরেশনের বিশেষ গাড়িতে করে ১৩টি মৃতদেহ সৎকারের জন্য নেওয়া হয় গড়িয়ার বোড়াল মহাশ্মশানঘাটে। বিশেষ গাড়ি থেকে মৃতদেহগুলো নামানো হয় অমানবিকভাবে, আঁকশি বা বড় আকারের চিমটি দিয়ে।
স্থানীয় লোকজন এত মৃতদেহ একসঙ্গে মহাশ্মশানঘাটে আনায় সন্দেহ করে। তারা ধারণা করে, হয়তো করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মৃতদেহ আনা হয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন এসব মৃতদেহ ওই শ্মশানে সৎকার করার ব্যাপারে আপত্তি তোলে।
জানা যায়, একপর্যায়ে শ্মশানঘাটের ডোমেরাও মৃতদেহ সৎকার করতে আপত্তি জানান।
এলাকাবাসী মৃতদেহগুলো ওই শ্মশানে সৎকার না করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর। তিনি আপত্তি তোলেন, কেন তাঁকে না জানিয়ে তাঁর এলাকার শ্মশানঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে এই মৃতদেহগুলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মৃতদেহ ফের ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
স্থানীয় কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, তাঁর এলাকার শ্মশানঘাটে বেওয়ারিশ লাশ দাহ করার কথা তাঁকে আগে জানানো হয়নি। লাশগুলো শ্মশানে আনার পর তিনি জানতে পারেন, কলকাতা পৌর করপোরেশন তা সৎকার করবে।
এ ঘটনার কথা গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরে কলকাতা পৌর করপোরেশনের মুখ্য প্রশাসক ও পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিদের মৃতদেহ নিয়মমতো ৪৫ দিন মর্গে রাখার পর সৎকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গড়িয়া শ্মশানঘাটে যা হলো, তা দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, ওই মৃতদেহগুলো করোনা রোগীর নয়। তারা বেওয়ারিশ। বেওয়ারিশ লাশ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মর্গে রাখার পর তা সৎকার করার জন্য কলকাতা পৌর করপোরেশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারাই বেওয়ারিশ মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, মৃতদেহগুলো কোভিড-১৯ রোগীর। তৃণমূল করোনা রোগীর লাশ চুরি করেছে।
কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সিপিএমের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, মৃত্যু যে কারণেই হোক না কেন, বাংলার মানুষ মৃতদেহ নিয়ে বর্বরতা সহ্য করবে না। মৃতদেহগুলোর সঠিক তথ্য জানানো হোক।
ঘটনা জানার পর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেন, এটা অমানবিক। অসংবেদনশীল, হৃদয়হীন ঘটনা। সমাজের প্রথা অনুযায়ী শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে মৃতদেহের সৎকার করা উচিত।