বিশু / সমীপ, শিলচর (অসম): দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার কাছাড় হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলার মিজোরাম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লাগাতার আগ্রাসন ও হিংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আশু হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালকে স্মারকপত্র প্রদান করেছে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি (সিআরপিসি)।
সিআরপিসি স্মারকপত্রে উল্লেখ করেছে, কাছাড়ের লায়লাপুরের পার্শ্ববর্তী শেওড়াথল জিপি, চান্নিঘাট জিপি, করিমগঞ্জের মেদলিছড়া ও ভুবিরবন্দ এলাকা এবং হাইলাকান্দি জেলার ভাইছড়া অঞ্চলে মাস দীর্ঘদিন ধরে মিজোরাম পুলিশ ও মিজো দুর্বৃত্তদের আগ্রাসন ও হিংসাত্মক কার্যকলাপে আন্তরাজ্য সীমান্ত এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কাছাড়ের সীমান্তে অসংখ্য বসতবাড়ি পেট্রোল ঢেলে জ্বালানোর পাশাপাশি সুপারি বাগান তছনছ করেছে মিজো দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বোমা বিস্ফোরণে লায়লাপুর ৯৯০ নম্বর ধলাখাল এলপি স্কুলের গৃহ গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিজোরা।
স্মারকপত্রে সিআরপিসি লিখেছে, মিজোরাম সীমান্তবর্তী বরাক উপত্যকার সংশ্লিষ্ট ভূমিতে মিজোরাম পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে এমজেডপি, ওয়াইএমএ এবং অন্যান্য এনজিওর কর্মকর্তারা বেআইনিভাবে অসমের মাটিতে আগ্রাসন করছে। এছাড়া অসমের যুবকদের অপহরণ করে নানাভাবে অত্যাচার করছে মিজো দুষ্কৃতীরা। এমন-কি গত রবিবার লায়লাপুর ফ্রেঞ্চনগরের ইন্তাজ আলি নামের যুবককে পাগলাছড়া জঙ্গল থেকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে খুন করেছে মিজো দুষ্কৃতীরা। এভাবে মিজোরামের মাটিতে ভারতের নাগরিক খুন করে কার্যত দেশের ঐক্যতা ও সংবিধানের রীতি নিয়ম লঙ্ঘন করছে মিজোরা। ১৮৮৯ সালে লুসাই পাহাড়ের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে তদানীন্তন অবিভক্ত কাছাড় জেলায় বিভিন্নভাবে উগ্রপন্থা কার্যকলাপের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে স্মারকপত্রে।
বলা হয়েছে, ব্রিটিশ আমলের আগে মোগল সাম্রাজ্যের সময়ে সমগ্র করিমগঞ্জ সিলেট জেলার অধীনে ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে করিমগঞ্জের বিস্তর এলাকা মিজোরামের বলে জবরদখলের অপপ্রয়াসে হিংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে মিজোরাম। ১৮৪৯ সালের ৬ নভেম্বর কাছাড়ের সমতল অঞ্চল সোনাইয়ের ময়নারখালের দুটি কুকি পুঞ্জিতে আক্রমণ, হাইলাকান্দির আয়নাখাল চা বাগানে জনৈক ব্রিটিশ আধিকারিক উইনচেস্টারকে খুন করে লুণ্ঠন করেছে লুসাই পাহাড়ের মিজো দুর্বৃত্তরা। অতএব ইতিহাসের বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে মিজো দুর্বৃত্তদের লাগাতার লুণ্ঠন ও বেআইনি কার্যকলাপের নজির ইতিহাস প্রমাণিত বিষয়। এভাবে প্রচলিত বেআইনি কার্যকলাপে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছে সমতল এলাকার স্বাভাবিক জনজীবন।
হিংসাত্মক গোটা ঘটনাবলির রাশ টানতে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, অসমের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপালদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো দাবি উঠছে সর্বত্র। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক রাজীব রায়ের হাতে স্মারকপত্র প্রদান করেছেন সিআরপিসি-র কর্মকর্তারা। স্মারকপত্রের প্রতিলিপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অসমের রাজ্যপালের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সিআরপিসি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ, কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক মওলানা আতাউর রহমান মাঝারভুইয়াঁ, কাছাড় জেলা সভাপতি নীলাদ্রি রায়, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই লস্কর, সাধারণ সম্পাদক সমীরণ চৌধুরী।