কলকাতা: রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাড়ি চাপ তুলনামূলক কম। হাজারো ব্যস্ততায় পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টে নজর এল দুইজন। দুজন নাবালিকা দিশাহারার মত পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টের চারপাশে ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাদের এই অস্বাভাবিক গতিবিধি লক্ষ্য করছিলেন ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল তারক চক্রবর্তী। প্রশ্ন করতেই খোলসা হয় ভয়াবহ পাচারের ছক। শেষ পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার করতে সম্মত হন ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক। পুলিশি তত্পরতায় নাবালিকাদের পাচারের বিরাট চক্রান্ত ফাঁস হয় শহর কলকাতায় ।
রবিবারের সকালে মেয়ে দুটিকে পার্কসার্কাস সেভেন পয়েন্টের কাছে ইতস্তত ঘুরতে দেখেই সন্দেহ হয় ট্রাফিক পুলিশদের। ওদের গতিবিধি ভাল ঠেকেনি সেভেন পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা কর্তব্যরত পুলিশদের। দুই নাবালিকাকে দেখে মনে হচ্ছিল, জায়গাটা তাদের অচেনা। কারন দুই নাবালিকার দেখার ভঙ্গি বা ঘোরাফেরা বেশ সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল তাদের। এদিন পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টে ডিউটি করছিলেন কলকাতা পুলিশের ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ। ঠিক সেই সময়ে কনস্টেবল তারক চক্রবর্তী তাদের নিয়ে আসেন সার্জেন্ট স্নেহাশিষ মুখোপাধ্যায় ও রঞ্জিত সাহার কাছে।
হাজারো প্রশ্ন ও তার যথাযথ উত্তর না পেয়ে তাদের কিয়স্কে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। তারা বিপদগ্রস্ত বুঝে এরপর তাদের নিয়ে আসা হয় ইস্ট গার্ডের ট্রাফিক কিয়স্কে। তখন নাবালিকা দুজনের চোখে ভয়, মুখে উদ্বেগের ছাপ। কর্মরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা তাদের খাবার, জল ও দুধ খেতে দেন এবং আশ্বস্ত করেন। তাতে তাদের অস্থিরতা ও উদ্বেগ অনেকটা কমে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের নাম, বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করা হলে মেয়েদুটি জানায়, দুজনেই দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসিন্দা, একজনের বয়স ১২, অপরজনের ৮।
ধৈর্য ধরে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে জানা যায় তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। মেয়েদুটি জানায়, তাদের গ্রামের এক মহিলা কাজ দেবে বলে তাদের কলকাতায় নিয়ে আসে। কিন্তু কাজ না দিয়ে তাদের একটা জায়গায় আটকে রাখে, চলতে থাকে নির্যাতন ও ভয় দেখানো। মারধর ও বকাবকির মধ্যে ওদের শুধুই অপেক্ষা ছিল একটা সুযোগের। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা কোনোক্রমে পালায়। এরপরেই সেভেন পয়েন্টে এসে পৌঁছায় মেয়েদুটি।
দুই নাবালিকার কথা শুনে পুলিশের অনুমান সম্ভবত কাজ দেওয়ার অছিলায় পাচারের উদ্দেশে নাবালিকাদের কলকাতায় আনা হয়। কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক পুলিশের ইস্ট গার্ডের পুলিশ গোটা ঘটনা শুনে দ্রুত বেনিয়াপুকুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর আশিষ কুমার দে-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় দুই নাবালিকাকে এবং পুরো বিষয়টি জানানো হয়। বর্তমানে তারা এখন থানার নিরাপদ হেফাজতে রয়েছে।