- লেবার পার্টি থেকে কাউন্সিলর সাবিনা আক্তারের পদত্যাগ।
- আসন হারাচ্ছেন লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী।
- আজমলকে সমর্থন দেননি মেয়র লুৎফুর, লিফলেট থেকে ছবি প্রত্যাহারের দাবি।
লণ্ডন, ২৭ জুন- ‘ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানো হবে’, লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের এমন বালখিল্য ও জ্ঞানহীন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ও অপমানিত ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ডেইলি সান’ আয়োজিত একটি নির্বাচনি বিতর্ক অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে বাংলাদেশের নাম টেনে এনে তিনি এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্রিটিশ-বালাদেশিরা লেবার নেতার এই বাংলাদেশ বিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মন্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন এবং প্রতিবাদে ফুঁসছেন।
স্টারমারের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার ডেপুটি লিডার ও কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আমি লেবার পার্টির একজন গর্বিত সদস্য ছিলাম, কিন্তু পার্টির নেতা যখন আমার কমিউনিটিকে আলাদাভাবে টার্গেট করেন এবং আমার বাংলাদেশি পরিচয়কে অপমান করেন, তখন সেই দলের জন্য আমি আর গর্বিত হতে পারি না।”
গত ২৫ জুন, মঙ্গলবার, কনজারভেটিভ দলের ব্যর্থ ও তুমুল সমালোচিত রুয়ান্ডা পলিসি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নির্বাচনি বিতর্ক অনুষ্ঠানে লেবার নেতা বলেছেন, রুয়ান্ডা পলিসি অনেক ব্যয়বহুল এবং এটা বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। লেবার ক্ষমতায় এলে বরং কর্মী সংখ্যা বাড়িয়ে এসাইলাম সিকারদের আবেদনগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাদের এসাইলাম আবেদন ব্যর্থ হবে এবং যারা অবৈধভাবে ব্রিটেনে বসবাস করছেন তাদের রুয়ান্ডার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু এ কাজটি সম্ভব কি—না? সানের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কিয়ার স্টারমার বলেন, অবশ্যই সম্ভব। যেমন বাংলাদেশ একটি নিরাপদ দেশ। ফলে এসাইলাম আবেদন ব্যর্থ হওয়া বা অবৈধদের বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
সাবেক এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা জর্জ গ্যালওয়ে লেবার পার্টির নেতা স্টারমারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্টারমার বাংলাদেশিদের সম্পর্কে মন্তব্য করে নিজেই রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশিদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তারপর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি স্টারমারের দলকে ভোট দিতে পারে না।
আসন হারাচ্ছেন লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী
গাজার গণহত্যার বিপক্ষে অবস্থান না নেয়ায় রুশনারা আলী ও তাঁর দল লেবার পার্টি মুসলিম অধ্যুষিত বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনী আসনে এমনিতেই চাপে ছিলেন। তার উপর দলের প্রধান নেতা কিয়ার স্টারমারের বাংলাদেশ বিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মন্তব্যে বাংলাদেশি কমিউনিটি ক্ষিপ্ত হওয়ায় এবং ভোটে জবাব দেয়ার কথা বলায় রুশনারা আলী বেশ বিপাকে পড়েছেন। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন হারাচ্ছেন লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী।
আজমলকে সমর্থন দেননি মেয়র লুৎফুর, লিফলেট থেকে ছবি প্রত্যাহারের দাবি
বেথনাল গ্রীন এন্ড স্টেপনী আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর বিনা অনুমতিতে তাঁর নির্বাচনী লিফলেটে কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের ছবি ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ক্ষমতাসীন এসপায়ার পার্টির চেয়ারম্যান কালাম মাহমুদ আবু তাহের চৌধুরী ২৬ জুন বুধবার এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ তুলে নির্বাচনী লিফলেট থেকে বিনা অনুমতিতে প্রকাশিত ছবি প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমি গতকাল আমাদের দলীয় কাউন্সিলারদের কাছ থেকে জানতে পারলাম ও আজ ফেইসবুকে দেখলাম যে —একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী লিফলেটে আমার ছবি ও টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়রের ছবি ছাপিয়েছেন। আমাদের অনুমতি ব্যতীত এ ছবি প্রকাশ করা কখনো সমীচিন হয়নি। তাই আমাদের ছবিটি নির্বাচনী লিফলেট থেকে প্রত্যাহার করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট গ্রুপ ও প্রার্থীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
টাওয়ার হ্যামলেটসের রাজনীতিতে প্রভাবশালী লুৎফুর রহমান এসপায়ার দলীয় মেয়র। স্থানীয় জনগণের কাছে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে আজমল মাশরুর তাঁর নির্বাচনী লিফলেটে মেয়র লুৎফুর রহমানের ছবি ব্যবহার করায় মেয়র পার্লামেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুরকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে আলোচনা উঠে। এতে বেথনাল গ্রিন এন্ড স্টেপনি আসনের ভোটাররা বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এসপায়ার পার্টির চেয়ারম্যান এমন বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে এসপায়ার পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আমি পরিস্কার করে বলতে চাই যে, টাওয়ার হ্যামলেটস এসপায়ার পার্টি দলীয়ভাবে কোন এমপি প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি। আমরা আমাদের কাউন্সিলার, পার্টির মেম্বার ও হাজার হাজার সমর্থককে কোন বিশেষ প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য কোন নির্দেশনা দেইনি। তুলনামূলক যে ভাল হতে পারে তা বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোটাররাই সিদ্ধান্ত নিবেন।