একেকজনের চুল একেক ধরনের রং করা; পরনে জিন্সের ছেঁড়াফাটা প্যান্ট; গলায় চেইন; হাতে ব্রেসলেট আর সিগারেট—এই হলো কিশোর গ্যাংয়ের বেশির ভাগ সদস্যের বেশভূষা। কথাবার্তায় উগ্র; অশালীন শব্দের ব্যবহারও প্রচুর। রাজধানীর অন্য অনেক এলাকার মতো উঠতি বয়সী এসব ছেলের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ কামরাঙ্গীর চরের পূর্ব ও পশ্চিম রসুলপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ। অভিযোগ আছে, একাধিক কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি। স্থানীয় কাউন্সিলরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেকে।
এলাকাটি পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একেকটি কিশোর গ্যাং একেক মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার করে। একটি গ্যাংয়ের সদস্য ৩০ থেকে ৪০ জন। নেতৃত্বে থাকে একজন। বড়দের সালাম না দেওয়ার মতো অনেক তুচ্ছ কারণে এদের মধ্যে মারামারি দলাদলি লেগেই থাকে। এমনই এক দ্বন্দ্বে গত ১৫ জুলাই পূর্ব রসুলপুরে সজীব (১৫) নামে এক কিশোর খুন হয়।
কামরাঙ্গীর চর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি এক মাস হলো এখানে এসেছি। বিভিন্ন গলিতে কিশোর গ্যাংয়ের উপস্থিতি টের পাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, রসুলপুর এলাকার বিভিন্ন গলিতে কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডা। ৮ নম্বর গলির মাথায় আড্ডা দেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা অনেকটা উগ্র ভাব দেখিয়ে চলে যায়। রসুলপুর ৩ নম্বর গলির এক দোকানদার বলেন, ‘ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মারামারি-কাটাকাটি লেগেই থাকে। কারা এগুলো করে, সবাই জানে। কাউন্সিলর সব কিছু দেখেও দেখেন না।’
স্থানীয়রা জানায়, ১, ২ ও ৩ নম্বর গলি নিয়ন্ত্রণ করেন নাসির হোসেন (২৬) ও তাঁর সহযোগী তুহিন (২২)। কিংশোর গ্যাংয়ের সদস্য আছে ৭০ থেকে ৮০ জন। এরা বেশির ভাগ সময় পূর্ব রসুলপুর ১ নম্বর গলির মাথায় আওয়ামী লীগ নামধারী নেতা কামালের ক্লাবের সামনে আড্ডা দেয়। এ ছাড়া নদীর পারে টংঘরের নিচে মাদকের চালান আদান-প্রদান হয় বলেও জানা গেছে।
পূর্ব রসুলপুরের ৫, ৬, ৭ ও ৮ নম্বর গলি সিরাজ তালুকদার এবং জাবেদ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে সিরাজ তালুকদার সবার কাছে ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত। সিরাজ তালুকদার বলেন, ‘আমি ছোট্ট একটা মানুষ। এলাকায় বিভিন্ন মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারবেন আমি কেমন। এসবের সঙ্গে আমি জড়িত না। বরং বিভিন্ন সময় আসামি ধরিয়ে দিই বলে এমন অভিযোগ আসছে।’
অভিযোগ আছে, সিরাজ তালুকদার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তিনিই গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছেন। পশ্চিম রসুলপুরে একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন মশিউর ও শহীদুল্লাহ। এই গ্রুপের আয়ের উৎস মাদক ও জুয়া। শহীদুলের গ্যারেজে সব সময় জুয়ার আসর চলে। কেউ কিছু বললে সিরাজ ও শহীদুল্লাহ কাউন্সিলরের ভয় দেখান। অভিযোগ আছে, কামরাঙ্গীর চর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হোসেন বিপ্লব এলাকায় ‘ইয়ামিন’ এবং ‘ফয়সাল’ নামে দুটি গ্রুপ নিযন্ত্রণ করেন।
কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘সিরাজ ছাড়া বাকিদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ থাকলেও কোনো অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত না। একজনের অপরাধের দায় অন্য কেউ নেয় না।’ এ বিষয়ে কথা বলতে পারভেজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উৎসঃ কালের কণ্ঠ