সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আবার রাজপথে নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা। কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে শাহবাগ মোড়সহ সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আর রোববার থেকে আরও বড় ধরণের আন্দোলনে শুরু করেছে। অপরদিকে পেনশন ইস্যু নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। শিক্ষকদের আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের কোটা বাতিলের আন্দোলন রাজপথে চলে এসেছে।
এখন প্রশ্ন হল-কোটা একটা মীমাংসীত ইস্যু। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট কোটা প্রথা বাতিল করে রায় দিয়েছে। এরপর থেকে আদালতের রায় মেনেই সব ধরণের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আবার হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা প্রথাকে ফিরিয়ে আনলো কেন? কাদের ইন্ধনে কোটা প্রথা ফিরিয়ে আনতে আপিল করা হয়েছিল?
তারপর, সারাদেশে যখন দুর্র্নীতি-লুটপাট ও ভারতের সাথে করা ট্রানজিট চুক্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে তখন কোটা প্রথা ফিরিয়ে এনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তায় নামানো হল কেন? কোটা ফিরিয়ে আনার রায় কি আদালত দিয়েছে নাকি সরকার আদালতকে ব্যবহার করে এটা করেছে? এসব প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে চাউড় হচ্ছে।
খোজ নিয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনগুলো সরকারের পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে। আন্দোলনরত অনেক শিক্ষার্থীই বলছেন, আমরা কল্পনাও করিনি যে আদালত আবার কোটার পক্ষে রায় দিবে। কোটা নিয়ে আমাদেরকে আবার রাস্তায় নামতে হবে সেটা আমাদের ধারণায় ছিল না। কেন এরকমটা হল আমরা বুঝতে পারছি।
জানা গেছে, দুইটি কারণে সরকার কোটা প্রথা ও পেনশনকে সামনে এনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তায় নামিয়েছে। প্রথমত, কিছুদিন ধরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাটের খবর বেরিয়ে আসছে। যাদের দুর্নীতির তথ্য বেরুচ্ছে তাদের প্রায় সবাই হাজার কোটি টাকার মালিক। বিশেষ করে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া, একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে এনবিআরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও ব্যাপক দুর্নীতি-লুটপাটের খবর বেরিয়ে আসছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন-রাষ্ট্রের সকল সেক্টরেই এখন দুর্নীতির মহোৎসব চলছে।
প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের পিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত দুর্নীতিতে লিপ্ত। একের পর এক এসব দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসায় সরকার চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এজন্য এসব থেকে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে সরাতে সরকার একটা পথ খুজতেছিল। নতুন কোনো ইস্যু সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল।তারপর, কিছুদিন আগে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করে এসেছেন। এই সফরে তিনি কিছু আনতে না পারলেও দিয়ে এসেছেন অনেক কিছু। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের ট্রেন চলাচলের অনুমতি দিয়ে এসেছেন। এটা নিয়েও সারাদেশে মানুষ কঠোর সমালোচনা করছে। বলা যায়, হাসিনার এবারের ভারত সফল নিয়ে দেশের মানুষ চরমভাবে ক্ষুব্দ হয়েছে। মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি-লুটপাট এবং ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিষয়টিই এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
জানা গেছে, দুর্নীতি-লুটপাট আর ট্রানজিট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরাতেই মূলত কোটা প্রথাকে সামনে নিয়ে এসছে। কারণ এখন দেশের আর এমন কানো ইস্যু নাই যেটার কারণে মানুষের দৃষ্টি দুর্নীতি-লুটপাট ও ট্রানজিট থেকে সরে আসবে। এজন্য কথিত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানকে দিয়ে কোটা ফিরিয়ে আনার আপিল করেছিল। আর হাসিনার অনুগত প্রধান বিচারপতিকে বলে দিয়েছে আপিল বিভাগ যাতে কোটার পক্ষে রায় দেয়।
একটি সূত্র বলেছে, কোটা বাতিল হয় কিনা এটা এখনো নিশ্চিত নয়। কিন্তু আন্দোলনটা একেবারেই পরিকল্পিত। এমনো হতে পারে কিছুদিন পর মানুষ যখন দুর্নীতি-লুটপাট ও ট্রানজিটের কথা ভুলে যাবে তখন আবার কোটা প্রথা বাতিল করে রায় দিবে।