|| মিনার রশিদ ||
আমাদের এক আত্মীয় আজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন । ভদ্র লোক সরকারী কলেজের রিটায়ার্ড প্রফেসর ছিলেন । বয়েস সত্তর বা আশির ঘরে হবে । কোভিড পজেটিভ জানার পর এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতেই তিনি শেষ নি:শ্বাসটি ত্যাগ করেছেন । অনেক চেষ্টা করেও ঢাকার কোনো হাসপাতালেই ভর্তি করানো সম্ভব হয় নাই ।
এই ভদ্রলোক এবং তার পরিবার আওয়ামী ঘরানার । তাই বিষয়টি আমাকে একটু অন্যভাবে ধাক্কা দিয়েছে !
কে জানে মন্ত্রীদের চাপাবাজিতে এই ভদ্রলোকও হয়তো বিশ্বাস করেছিলেন , করোনা প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতি পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম । আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী । আমরা শীঘ্রই
চায়নার মত হাসপাতাল বানাবো । করোনা প্রতিরোধে ঢাকা বিমানবন্দরের মত ব্যবস্থা উন্নত দেশগুলিতেও নেই ।
কে জানে নাসিমের মতো তিনিও হয়তো বিশ্বাস করতেন , শেখ হাসিনার মত নেত্রী পেয়েছি বলেই করোনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি । যেদেশের প্রধানমন্ত্রী তাহাজ্জুদ পড়ে দিন শুরু করেন সেদেশে করোনা আসবে না । এসব কথা শুনে আবেগে তিনিও হয়তো চোখের পানি মুছে গেছেন ।
আজকে যিনি এভাবে অবহেলায় বা বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন তিনিই জীবিত থাকতে এই সরকারের সকল উন্নয়নের কল্পকাহিনীকে শুধু বিশ্বাসই করতেন না – নিজেও সাধ্যমত হয়তো প্রচার করতেন । চারপাশের লুটপাট ও সন্ত্রাসের কিছু চিত্র তুলে ধরলে বলতেন , ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো !
এই ধারণাটি এদের অন্তরে ধর্মীয় বিশ্বাসের মত গেথে গিয়েছে ।
কিন্তু বিএনপি জামায়াতের ক্ষমতা হারানোর একটা ভয় ছিল । সেই ভয়টি এই সরকারের অন্তরে নেই । লুটেরারা দেশের জনগণের হাত পা বেঁধে ফেলেছে । জনগণের ভাগ্য নিয়ে যতই ছিনিমিনি খেলুক – কিছুই করার নেই ।
এই সব যুক্তিও এদের বদ্ধমূল ধারণা / চেতনা / জুজুর সামনে কাজে লাগতো না । সকল কথার শেষে কনক্লুশন টানতেন , ‘ দেশ মাশাল্লা অনেক ভালোই চলছে’ ।
এই কথাগুলি যাদের বোঝানো যেতো না তাদেরকে হয়তো শেষমেষ করোনা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে !
সমস্যা হলো , জীবনের সেই শেষ উপলব্ধিটুকু শেয়ার করে যেতে পারলেন না ।
বিএনপি জামায়াত সমর্থক কিংবা সাধারণ দেশবাসীর কেউ এমন অন্তিম মুহূর্তে চাপাবাজ সরকারকে
ইচ্ছেমত মত গালি / অভিশাপ দিয়ে মনের ক্ষোভটুকু একটু কমাতে পারেন ।
এই হতভাগাদের সেই সুযোগটিও হয় না ।