ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমাদের প্রতি রাগান্বিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) এত রেগেছেন কেন? পশ্চিমাদের প্রতি সম্ভবত নিরাপত্তা বোধ করছেন না। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছেন।’
সোমবার (১৫ মে) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা খুব সুন্দর করে কথা বলেন। তিনি সবসময় অ্যাসার্ট (জাহির করা) করে কথা বলেন। জাতিকে তিনি একটা ধারণা দিতে চান যে এখানে বিকল্প কোনো নেতৃত্ব নেই। সেভাবেই তিনি এই যে সফরটা করেছেন, সফর সম্পর্কে তিনি ধারণা দিতে চান সফর সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। কিন্তু আমরা যেটা জানতে পেরেছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে, এ সফরের ফলাফল জিরো প্লাস। আইএমএফ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে কিছু বলেনি। সফরের অর্জন জনগণ বিচার করবে। আমরা মনে করি বিশেষ কোনো অর্জন হয়েছে বলে জানা নেই।’
এতদিন পর প্রধানমন্ত্রী স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে কথা বলছেন কেন সে বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি কেন এতদিন পর স্যাংশনস’র (নিষেধাজ্ঞা) ওপর বিষোদগার করছেন? তিনি ভালো করে জানেন, যারা দেয় তারা কিসের ওপর স্যাংশনস দেয়। কিছুদিন আগে রাশিয়ার জাহাজ স্যাংশনস’র কারণে ঢুকতে পারেনি, বাংলাদেশ ফেরত দিয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কী কেনে তা মোটামুটি আমরা সবাই জানি, বুঝতে পারি। তিনি সম্ভবত ইরিটেটেড হয়ে আছেন পশ্চিমাদের প্রতি।’
রিজার্ভ সংকটের কারণে সামনে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সময়ের ব্যাপার মাত্র উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেসব ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানি করেন, তারা ডলারের কারণে আমদানি করতে পারছেন না। প্রধান কারণ হচ্ছে রিজার্ভের পরিমাণ যা (আছে) তা দিয়ে পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পদ্মা সেতুর যখন ঋণ পরিশোধ করতে হবে তখন এটা সামনে আরও মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আজকে পত্রিকায় আসছে, বিমানবন্দরের জন্য আগামী বছর থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। মারাত্মক সংকট সৃষ্টি সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
প্রধানমন্ত্রী ময়ূর সিংহাসনে বসে আছেন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ময়ূর সিংহাসনে বসি না, আমরা জনগণের কাতারে জনগণের চেয়ারে বসি।’
আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক দশকে বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই। তাদের লোকেরা দুর্নীতি করেছে। এখন সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে।’
পশ্চিমাদের নিয়মিত প্রোটোকলের বাইরে কোনো প্রটোকল না দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছে সরকার, তাই পশ্চিমাদের ওপর রাগান্বিত তিনি। আমরা আশা করবো, কোনো দেশের সঙ্গে যেন বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক নষ্ট না হয়।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক প্রো-ভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার অংশ নেন।