চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের একাধিক গণমাধ্যম। বাংলাদেশের পণ্যে চীন সরকারের দেয়া শুল্ক সুবিধাকে তারা ‘খয়রাতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। শনিবার (২০ জুন) ওই খবর প্রকাশের পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশের সামাজিকমাধ্যম।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা প্রথমে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে খবর প্রকাশ করে। পরে জি নিউজ তাদের সংবাদের শিরোনামেই ‘খয়রাতি’ শব্দ ব্যবহার করে। ভারতীয় মিডিয়ার এমন গাত্রদাহ নিয়ে বাংলাদেশের একাধিক মিডিয়া খবর প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশের মিডিয়ায় এভাবে কটাক্ষ করায় বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছে।
ভারতীয় মিডিয়ার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী আনিস সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই আনন্দবাজার আমি পড়ি না। সিরিয়াসলি। অনেক বিজ্ঞ আর শিক্ষকদের কথায় কথায় সুসাংবাদিকতার জন্য পত্রিকাটির উদাহরণ টানতে দেখি। আমি সেই বিজ্ঞদের মতো হতে পারিনি। আমি দেখি “সাংবাদিকতা” হয়েছে কিনা। সেটা অজপাড়ার কোনও অঞ্চলের গণমাধ্যম হলেও। জনপ্রিয়তাই সবকিছু নয়… ছন্দে বন্দে মন্দে দ্বন্দ্বে লেখাই সাংবাদিকতার মাপকাঠি নয়।’
ঢাকার প্রখ্যাত সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আনন্দবাজার পত্রিকার ধৃষ্টতা… পত্রিকাটির ২০ জুনের অনলাইন সংস্করণে “লাদাখের পর ঢাকাকে পাশে টানছে বেইজিং” শিরোনামের খবরের প্রথম লাইন: “বাণিজ্যিক লগ্নি আর খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা নতুন নয় চীনের”।
‘১. বাংলাদেশের জন্য আনন্দবাজারের অপমানকর এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২. ঢাকা থেকে যে নিজস্ব সংবাদদাতা এই খবর এ ভাষায় পাঠিয়েছেন তার সম্পর্কেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক। আনন্দবাজার পত্রিকার এই আচরণ বিপরীতমুখী। গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারিভাবেই এর প্রতিবাদ জানানো উচিত।’
ঢাকার আরেক প্রভাবশালী সাংবাদিক গাজী টেলিভিশন (জিটিভি), সারাবাংলা.নেট ও দৈনিক সারাবাংলার (প্রকাশিতব্য) এডিটর-ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা সামাজিকমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিকতাকে খোদ কলকাতাতেই “বাজারি সাংবাদিকতা” বলা হয়। এবার কি তারা শুরু করলো খয়রাতি সাংবাদিকতা? চীন নাকি খয়রাতি সাহায্য ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের জন্য!!! সাংবাদিকতার সামান্য নীতি-নৈতিকতা মানলে একটা রিপোর্টে এমন মন্তব্য আসতে পারে না। রিপোর্টটি আবার গেছে ঢাকা থেকে, যিনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের নাগরিক!
‘ভারত-বাংলাদেশ চমৎকার সম্পর্ক। এটি দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। দুটি দেশের এমন সুন্দর সম্পর্কের মাঝে এটি কী ধরনের সাংবাদিকতা? চীন তার নিজস্ব অর্থনৈতিক বিবেচনায় কিছু পণ্যে শুল্ক সুবিধা দিয়েছে, সেটা খয়রাতি সাহায্য হয় কী করে?
‘কিছু লোকের আবার চুলকানি শুরু হবে ভারত নিয়ে। এখানে ভারতের দোষ কোথায়? এটা একটা পত্রিকার ভাষ্য। ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের আন্তরিক বন্ধু, সেটা ’৭১ সালেই প্রমাণিত। এখনও সেই বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত।’
উন্নয়ন ও অধিকারকর্মী শাহানা হুদা আনন্দবাজার পত্রিকার সংবাদের প্রতিবাদ জানানোর দাবি করে লিখেছেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার আনন্দবাজার পত্রিকার এই জঘন্য প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাক।’