- দ্রব্যমূল্য কমানোর কোন টুলস সরকারের হাতে নাই!
- ২০০ টাকা খেজুরের শুল্ক দিতে হচ্ছে ২০৮ টাকা!
বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: জনগণ বরই খাবে আর মন্ত্রী খাবেন আঙুর-খেজুর, কি আশ্চর্য রাষ্ট্রব্যবস্থা! আঙুর ও খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এ পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন,‘বরই দিয়ে ইফতার করেন না কেন? আঙুর-খেজুর লাগবে কেন? আপেল লাগবে কেন? আর কিছু নেই আমাদের দেশে? পেয়ারা দেন না, সব কিছু দেন। প্লেটটা ওভাবে সাজান। ইফতার পার্টি তো বলেই দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দরকার নেই। কাজেই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। আপনার সংসারে যেমন আপনি দেখেন, এইভাবে দেশটারেও দেখেন আপনারাও সাংবাদিকরা। আকাশ থেকে খালি দেখেন না, নিচের থেকে এসেছেন আপনারাও। সেইগুলোও দেখেন, আশেপাশে দেখেন।’
শিল্পমন্ত্রী আঙুর ও খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ এমন সময় দিচ্ছেন, যখন সরকার পুরো বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে পরিপূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অসৎ ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আর লুটেরাদের কাছে সরকার অসহায়। পরামর্শ প্রদানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ছুটছে। ফলে জনগণ নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে।
তার এমন বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ওই দিন বিকেলে এক সমাবেশে শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি বরই দিয়ে ইফতার করবো। আর তুই খেজুর-আঙুর খাবি? তা হবে না, তা হবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, রোজা থাকার পর সুগার লেভেল কমে যায়। আর ইমিডিয়েট সুগার সোর্স হিসেবে খেজুর খুব ভালো কাজ দেয়। ‘খেজুরের বিকল্প বরই’ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খেজুরের চেয়ে বরইতে ক্যালরি অনেক কম থাকে। সেই সঙ্গে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলোও বরইতে খেজুরের তুলনায় কম।’
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, রোজা থেকে সারাদিন পানি পান না করার কারণে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া দেহে গ্লুকোজ শর্ট হয়ে যায়। এটি পূরণে চিনির শরবতের চেয়ে অনেক ভালো খেজুর খাওয়া। কারণ, খেজুরে কোনো ফ্যাট নেই। সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি খেজুর খেয়েই পূরণ করা সম্ভব। এমনকি এটি ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘বরইয়ে উপকারী নিউট্রিয়েন্ট থাকে। তবে তা খেজুরের বিকল্প কখনোই হতে পারে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ইসলামের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) খেজুর খেতেন। তার খেজুরের প্রতি বেশি আকর্ষণের ফলে এটা ওই সময় বরকতের বিষয় হিসেবে গণ্য হতো। কালের ধারাবাহিকতায় এখনও এটা প্রচলিত রয়েছে। এটা রাসুলের সঙ্গে আমাদের আবেগ ও ভালোবাসার একটা সম্পর্ক।’ তিনি বলেন, রমজানের ইফতারিতে খেজুর মানুষের মনের আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। যদি সেটা সুলভ হয় তাহলে মানুষের চাহিদাটা মেটে। কিন্তু বাজারদরের ব্যাপারটা মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে মানুষ অস্বস্তিবোধ করে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম খেজুরের বিকল্প হিসেবে বরই খাওয়ার বক্তব্য নিয়ে বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এসব জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল নন বলেই এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে আহত করছেন। অথচ খাদ্যসামগ্রীর দাম মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখার যে দায়িত্ব, সেটি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
আসলে দ্রব্যমূল্য কমানোর কোন টুলস সরকারের হাতে নাই। ২০০ টাকা খেজুরের শুল্ক দিতে হচ্ছে ২০৮ টাকা! রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকার জনগণকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সরকারের সুবিধাভোগী অংশের ব্যাপক লুটপাটের দায় মেটাতে হচ্ছে জনগণকে। প্রতিটি উন্নয়ন কাজের অতিরিক্ত ব্যায়ের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে সরকার।
গত বছর রোজায় যে খেজুর পাইকারি বাজারে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, এবার সেই খেজুরের ওপরই আমদানি শুল্ক গুনতে হচ্ছে ২০৮ টাকা। এতে পাইকারি বাজারেই খেজুরটির দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।