ঢাকা অফিস: নীলফামারীর ডোমারে পাঁচটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে ১৯৯৩ এর ২৫ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে পার হয়েছে তিন দশকের বেশি সময়। ১১ হাজার ৭০০ টাকা মূল্যের গরু চুরি এই মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই বছরের সাজার রায় আসামি তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে। এরপর দায়রা আদালত হয়ে হাইকোর্টে মামলাটি নিস্পত্তিতে লেগে যায় ৩০ বছর। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে তোফাজ্জলকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বেকসুর খালাস দেন।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ মামলার ১২ পৃষ্টার রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এতে ৩১ বছর আগের এই মামলার তদন্তে ব্যাপক অবহেলা, অনিয়মসহ বিচারিক আদালতের বিচারকদের রায় বিচারকসূলভ হয়নি বলে পর্যবেক্ষন দিয়েছে হাইকোর্ট। এ মামলায় আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, পুরনো মামলা নিস্পত্তির অংশ হিসেবে এই মামলাটি নিস্পত্তি করেন হাইকোর্ট। তবে খালাস পাওয়া ব্যাক্তির সবশেষ অবস্থান নিয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি আইনজীবীরা।
মামলার নথি অনুযায়ী, নীলফামারী সদরের ধোবাডাঙ্গা গ্রামের মানিক চন্দ্র রায় স্থানীয় থানায় অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তাদের পাঁচটি গরু (আনুমানিক মূল্য ১১ হাজার ৭০০ টাকা) চুরি হয়। এরপর তিনি ডোমার থানায় গিয়ে তার গরুগুলো সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় তোফাজ্জল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি নিয়ে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এক রায়ে দণ্ডবিধির ৪৫৭/৩৮০/ও ৪১১ ধারায় জয়পুরহাটের তোফাজ্জাল হোসেনকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন। আরেক আসামি সাইফুল ইসলামকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে খালাস দেন আদালত। তবে জামিনে থাকা আাসমি রায়ের সময় পলাতক ছিলেন।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের ৯ বছর সাত মাস ৭দিন পর জেলা দায়রা আদালতে তামাদি মওকুফের আবেদনসহ আপিল করেন আসামি। আদালত ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি আপিলের আবেদন নাকচ করে আদেশ দেন। দায়রা আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন তোফাজ্জল। পরে হাইকোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও দায়রা আদালতের রায়ের বৈধতা প্রশ্নে রুল দেন। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল চূড়ান্ত ঘোষণা করে বিচারিক আদালতের রায় ও আদেশ বাতিল করে তোফাজ্জলকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বেকসুর খালাস দেন।
রায়ে এজাহারের অসঙ্গতি তুলে ধরে হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলে, ১৯৯৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিরণীতে আসামিদের গ্রেপ্তার বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। ২৮ ফেব্রুয়ারি আদেশে দেখা যায়, আসামিদের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪ ধারায় (ফৌজদারি কার্যবিধি) গ্রেপ্তরপূর্বক আটক করা হলে এই মামলায় পুন:গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি আসামিকে গরুসহ থানায় হাজির করে গ্রেপ্তার দেখানো হলো। সে আসামি ২৭ ফেব্রুয়ারি ডোমার থানায় কীভাবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয়। হাইকোর্ট বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, প্রকৃতপক্ষে এজাহারটি একটি মিথ্যা এজাহার। আসামিকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘এই মামলায় এজাহার দাখিল, গ্রহণ এবং তদন্তে ব্যাপক অবহেলা, অনিয়ম ও অন্যায় হয়েছে প্রতীয়মান। অপরদিকে বিজ্ঞ বিচারিক ও আপিল আদালতও গতানুগতিকভাবে রায় প্রদান করেছে। সাক্ষ্য ও নথি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে উভয় আদালত চরম অবহেলা ও অনিয়ম করেছেন যা বিচারকসূলভ নয়।’
হাইকোর্টে এই মামলাটিতে আসামিরপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাকী বেগম ও ফেরদৌসি আক্তার। জানতে চাইলে লাকী বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই সময় পুরনো ২০০ মামলা নিস্পত্তির অংশ হিসেবে এই মামলাটিও শেষ করেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বৈধতা নিয়ে রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুল চূড়ান্ত ঘোষণা করে রায়ে ওই ব্যাক্তিকে খালাস দেন আদালত। তবে আসামিপক্ষে পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। খালাসপ্রাপ্ত ব্যাক্তি এখন কোথায়, কি অবস্থায় আছেন সেবিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’