লন্ডন, ২৮ সেপ্টেম্বর: মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ) রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী এক ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করে, যেখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়। যার মধ্যে একটি হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় এবং দ্বিতীয়টি ব্রিটেনে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি।
প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক সদস্য ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সভাটি পরিণত হয় এক তাৎপর্যপূর্ণ আয়োজনে, যা রূপ নেয় চিন্তামূলক, সংহতিমূলক ও কৌশলগত পদক্ষেপ নির্ধারণের এক মঞ্চে।
মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুসাদ্দিক আহমেদ এর সঞ্চালনায় তিনজন বিশিষ্ট বক্তা তাঁদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য তুলে ধরেন।
আলোচকদের মধ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতা ও শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ আব্দুল বারি ব্রিটিশ মুসলিমদের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সময় এসেছে আমাদেরকে বর্ণবৈষম্য ও ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তিনি তার আলোচনার মাধ্যমে নাগরিকদের অংশগ্রহণ, আন্তঃধর্মীয় সহযোগিতা এবং তরুণদের ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় বক্তা কাউন্সিলর ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (CAABU) এর স্টেকহোল্ডার রিলেশনের প্রধান শাহেদা দেওয়ান সকলকে সমন্বিতভাবে গাজায় চলমান গণহত্যার বাস্তব ও করুণ চিত্র তুলে ধরার আহবান জানান। তিনি অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর জোরালো করতে ও মানবিক সহায়তা দিতে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার রক্ষায় নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আমাদেরকে সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
সভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বক্তা কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ড. আব্দুল্লাহ ফালিক যুক্তরাজ্যে ইসলামবিদ্বেষের ঘটনার বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঘৃণাজনিত অপরাধের ঘটনা নথিবদ্ধ করা, ভুক্তভোগীদের সহায়তা এবং বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি এবং একটি সময়েরও দাবি।
সভায় মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন সামগ্রিকভাবে চারটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ঘোষণা করে,
১. স্থানীয় সেফটি কমিটি গঠন, যারা হুমকি পর্যবেক্ষণ, ভুক্তভোগীদের সহায়তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে।
২. শিক্ষা ও গণমাধ্যমভিত্তিক প্রোগ্রাম চালু করে ইসলামোফোবিয়া ও গাজা সংকট নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৩. আইনি সহায়তা, ঘৃণাজনিত অপরাধ রিপোর্টিং এবং নাগরিক অংশগ্রহণে প্রশিক্ষণের জন্য সম্পদ সরবরাহ করা।
৪. বর্ণবাদবিরোধী ও মানবিক সংগঠনের সঙ্গে জোট গড়ে তোলা, যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত প্রভাব সৃষ্টি হয়।
এমসিএ এর সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার হামিদ হোসেন আজাদ সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের শান্তি, ন্যায়বিচার ও ঐক্যের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আমরা যখন একসাথে দাঁড়াই, তখন আমরা একটি শক্তিশালী বার্তা দেই, ঘৃণা, বৈষম্য এবং নিরীহ মানুষকে টার্গেট করার কোনও স্থান সভ্য সমাজে নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, এমসিএ’র লক্ষ্য হলো বোঝাপড়া বাড়ানো, সহমর্মিতা জাগানো এবং বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলা। তিনি বলেন, “আমরা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য কাজ করছি। সকল নিপীড়িত সম্প্রদায়ের পাশে থাকার অঙ্গীকার আমাদের। তিনি গাজা অভিমুখে যাত্রাকারী মানবিক দলে অংশগ্রহণকারীদের সাহস ও প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান জানান এবং তাদের এ মহান উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সভাপতি তার বক্তব্যে এমসিএ এর সদস্য ও সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের সকলকে প্রতিটি মুহূর্তের জন্য সক্রিয় থাকতে হবে, নিয়মিত তথ্যসমৃদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রতিকূলতার মাঝেও সম্মিলিত কণ্ঠই সবচেয়ে বড় শক্তি বলে উল্লেখ করেছেন সংগঠনটির সভাপতি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি