পঙ্কজকুমার দেব, হাফলং: অসমের লামডিং-বদরপুর পাহাড় লাইনের ষাটের অধিক এলাকার ভূমিধস সরিয়ে অবশেষে সামগ্রিক ভাবে সচল রেল রুট। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে এন এফ রেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার পাশাপাশি শুক্রবার থেকে গুয়াহাটি-শিলচর যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে সক্ষম হয়েছে। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাধারণ যাত্রীরা।এদিন ট্রেন প্রায় একঘন্টা বিলম্বে চলে।
তাই ঘড়িতে যখন সকাল ১১ বেজে ৫৮ মিনিট ঠিক তখন লং হুইসেল দিয়ে নিউ হাফলং স্টেশনে প্রবেশ করে গুয়াহাটি গামী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার। প্রথম দিনের যাত্রীবাহী ট্রেন যদিও কিন্তু স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা নেহাৎ কম ছিল না।প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৩ মে অন্তিম বারের জন্য গুয়াহাটি- শিলচর এবং শিলচর- গুয়াহাটির মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করেছিল। এরপর ভারি বৃষ্টিপাতের জেরে পার্বত্য রেল রুটের স্থানে স্থানে ভূমিস্খলন হয়। ফলস্বরূপ ১৪ মে থেকে পাহাড় লাইনে সব ধরনের ট্রেন চলাচল স্তব্ধ হয়ে পড়ে। ট্র্যাকের উপর থাকা যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি কামড়া পাহাড় থেকে নেমে আসা জলস্রোত লাইনচ্যুত করেছিল।জল কাঁদায় একাকার হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল নিউ হাফলং স্টেশন চত্বর।
যদিও স্বাভাবিক ছন্দে নিউ হাফলং, কিন্তু একশো শতাংশ হয়নি। হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরমধ্যে রেল কর্তৃপক্ষ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে দীর্ঘ দুই মাসের মাথায় ১৩ জুলাই থেকে পাহাড় লাইন সামগ্রিক ভাবে সচল করে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল সক্ষম হয়।আজ দুই মাস আট দিনের মাথায় গুয়াহাটি- শিলচরের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে গিয়ে রেল সফল হয়।এদিন গুয়াহাটি-শিলচরের মধ্যে চলাচল করা ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের প্রথম দিনের যাত্রায় যাত্রী ভিড় পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিউ হাফলং স্টেশনের ভেন্ডর থেকে অটোরিকশা চালকেরাও দীর্ঘ দিনের মাথায় নিজ কর্তব্যে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনুরূপ ভাবে ধসবিধ্বস্ত নিউ হাফলং স্টেশন প্রাণ ফিরে পায়।উল্লেখ্য,শিলচর-নিউ হাফলঙের মধ্যে ৩০ জুন থেকে বিশেষ স্পেশাল ট্রেন চলাচল আরম্ভ হয়েছিল। পরবর্তীতে ফাইডিং পর্যন্ত স্পেশাল ট্রেনের সম্প্রসারন করা হয় এবং ২১ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু শুক্রবার ফাইডিং ও দাওটুহাজার ধসবিধ্বস্ত লোকেশন দিয়ে সকুলমে যাত্রীবাহী ট্রেন ছুটে।দিনের ঠিক ১ টা বেজে ১৭ মিনিটে ১০ কিঃমিঃ গতিবেগে গুয়াহাট-শিলচর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার দাওটুহাজা ফাইডিঙের মূল ধসবিধ্বস্ত এলাকা অতিক্রম করে।
কারণ দাওটুহাজা ফাইডিঙের মধ্যে একাধিক এলাকায় ভূমিস্খলনের পাশাপাশি ট্র্যাকের নীচের মাটি ধুয়েমুছে চলে গিয়েছিল। গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা জনৈক যাত্রী বলেন ‘ সংবাদ মাধ্যম পত্রপত্রিকায় নিউ হাফলঙের বিধস্ত রূপ ব্যথিত করে তুলেছিল। তবে নিউ হাফলংকে স্বচক্ষে দেখতে পেয়ে আনন্দিত। তিনি বলেন পাহাড়ের ভূতাত্ত্বিক সমস্যা বা ভূমিস্খলনের কথা বিবেচনা করে বিকল্প রেলপথ জরুরি। এদিন ওই ট্রেনে চড়ে গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা কালে নিউ হাফলং স্টেশনে ট্রেনের আসনে বসে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মাইবাং ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক মিথিলেশ চক্রবর্তী বলেন ‘ দীর্ঘ দুই মাস পর পাহাড় লাইন সম্পূর্ণ সচল হয়েছে। এ অত্যন্ত সুখবর।
ট্রেন বন্ধ থাকায় পাহাড়, বরাক তথা ত্রিপুরা এতদঞ্চলের সাধারণ মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে এত তাড়াতাড়ি যে পাহাড় লাইন সচল হবে এবং যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে তা কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু রেল তা করে দেখিয়েছে। ধন্যবাদ রেল কর্তৃপক্ষকে। কারণ ভারি বৃষ্টিপাতের জেরে ট্রেন চলাচল ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি সড়কপথেও বরাক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। অবশ্য প্রকৃতি শান্ত হওয়ায় সাধারণ জনগণ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পেতে সক্ষম হয়।