পাতাঝরা হেমন্তকে আরও বিবর্ণ করে চলে গেলেন ‘সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য’-র স্রষ্টা। প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। স্থানীয় সময় অনুযায়ী রাত ৯ টায় বাংলাদেশের রাজশাহীতে নিজের বাসভবনে তিনি প্রয়াত হন।
তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া দুই বাংলার সাহিত্যমহলে।
আজিজুলের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের যবগ্রামে। ১৯৪৭-এ বাবা মায়ের সঙ্গে তিনিও চলে যান ওপার বাংলার খুলনায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন ১৯৬০ সালে। ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল অবধি, দীর্ঘ দিন তিনি দর্শনশাস্ত্র অধ্যাপনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাঁর কলম উহার দিয়েছে একের পর এক কালজয়ী গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। ১৯৬৪ সলে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য’। প্রথম গল্পের নাম ‘শকুন’। তাঁর অন্যান্য কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘পাতালে, হাসপাতালে’, ‘অপ্রকাশের ভার’, ‘রাঢ়বঙ্গের গল্প’ এবং ‘মা মেয়ের সংসার’। পাশাপাশি, পাঠকের মনে অনুরণিত হতে থাকে তাঁর কলম থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া ‘তৃষ্ণা’, ‘উত্তরবসন্তে’, ‘বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর’, ‘পরবাসী’, ‘আমৃত্যু আজীবন’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘খাঁচা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘ফেরা’, ‘ মন তার শঙ্খিনী’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘শোণিত সেতু’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘সরল হিংসা’, ‘খনন’, ‘সমুখে শান্তির পারাবার’, ‘বিধবাদের কথা’ ‘সারা দুপুর’ ও ‘কেউ আসেনি’। পাঠকদের মননের সঙ্গী হয়েছে তাঁর আত্মজীবনী ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’ এবং ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’।
কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল সম্মানিত হয়েছেন ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’ এবং ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ। ২০০৬ সালে প্রকাশিত ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য ২০০৮-এ সম্মানিত হন ‘আনন্দ পুরস্কার’-এ। হিন্দি, ইংরেজি ছাড়াও তাঁর রচনা অনূদিত হয়েছে রুশ, চেক এবং জাপানি ভাষায়।
গত কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। অগাস্ট মাসে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিত্সাধীন ছিলেন দু’ সপ্তাহের বেশি। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহীতে।
নিজের শহর থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন তিনি। রেখে গেলেন তাঁর সাহিত্যভাণ্ডারের অসংখ্য মণিমুক্তো। অগণিত পাঠকের জন্য।