ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়ের টাকা খরচের পর নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ২০ কোটি টাকা আয় হলেও পরীক্ষাসহ অন্যান্য খাতে ১২ কোটি খরচ হয়। বাকি আট কোটি টাকা ভাগাভাগি করার অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুপুরে ইউজিসির তদন্ত দল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে। নানা তথ্য-উপাত্ত, নথি তদন্ত কমিটি নিয়ে আসে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
তিন সদস্যের মধ্যে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরের নেতৃত্বে, ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. গোলাম দোস্তগীর বৈঠকে ছিলেন।
বৈঠক শেষে ইউজিসি সদস্য ড. মো. আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমরা সব নথিপত্র দেখতে এসেছিলাম। আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তের স্বার্থে যা যা দরকার আমরা পেয়েছি।’
আবু তাহের বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে ভর্তি ফরম বিক্রির ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা রাখতে হয়। বাকি ৬০ শতাংশ টাকা দিয়ে পরীক্ষা আয়োজন, প্রশ্নপত্র তৈরি, মডারেশন, ছাপানো, পরিবহন, আপ্যায়ন, আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তা করেছে কি না, তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।’
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার এ ব্যাপারে বলেন, ‘চাহিদা অনুসারে আমরা তাদের সব তথ্য দিতে সক্ষম হয়েছি। তারা পরে রিপোর্ট জমা দেবেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনই বলতে চাচ্ছি না দুর্নীতি বা কত টাকা ভাগাভাগি হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে আসা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সবাই বসে দ্রুত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট দেয়া হবে। অনিয়ম হলে কোন ধরনের শাস্তি হবে সেসব বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মূলত কত টাকা আয় হয়েছে, কীভাবে সেটা খরচ হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী খরচের টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে, উদ্বৃত টাকা কোথায় আছে, সেসব বিষয় দেখা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ভর্তি ফরমের দাম ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। ওই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরীক্ষা আয়োজনে খচর হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ হয় অন্য খাতে। বাকি আট কোটি টাকার বেশি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি ইউজিসি তিন সদস্যদের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগাভাগিকে ‘অর্থ আত্মসাৎ’ বলে অভিহিত করেছে ইউজিসি।
বৈঠকের আগে তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমরা ভর্তি ফরম বিক্রির আয় নিয়ে অনিয়ম ও তহবিল তছরুপের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্তে এসেছি। রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চাইব, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি ফরম বিক্রির আয় কত, ব্যয় কত, সম্মানী কত আর বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে কত জমা রাখা হয়েছে।’ সূত্র: ঢাকা টাইমস