বিশেষ প্রতিবেদক: তিন লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানিসহ ৫ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন।
সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
সভাশেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৯টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয় প্রস্তাবগুলোর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগের ১টি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল।
এরমধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। অর্থাৎ, অনুমোদিত ৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৬৮৬ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৮৬ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৪২৭ কোটি ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ ২৫৯ কোটি ৩৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তথ্য জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
সভা শেষে অতিরিক্ত সচিব বলেন, চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড (টিএসপিসিএল)-এর জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন (+৫%) ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিএসপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ হাজার মে.টন (+৫%) ফসফরিক এসিড আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হলে মাত্র ১টি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স, ঢাকা ( প্রধান সরবরাহকারী: আরিস ফার্টিলাইজার্স গ্রুপ পিটিই লি., সিঙ্গাপুর) ফসফরিক এসিড সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১০০ কোটি ৮০ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৫ টাকা।
তিনি বলেন, সভায় ২০২২ সালের (মে ও জুন) সময়ে জি-টু-জি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ মে.টন গ্যাস অয়েল এবং ৭৫ হাজার মে.টন জেট এ-১ আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের (মে ও জুন) সময়ের জন্য ২ থেকে ৩ লাখ মে.টন গ্যাস অয়েল এবং ৭৫ হাজার মে.টন জেট এ-১ আমদানির লক্ষ্যে ৩টি প্যাকেজে বিভক্ত করে জি-টু-জি সরবরাহকারী ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে।
সবগুলো প্রস্তাবই প্রাথমিকভাবে রেসপনসিভ হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান (১) প্যাকেজ-এ ও বি ‘তে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক পিটি.বুমি সিয়াক পুসাকু জাপিন এই তেল সরবরাহ করবে। ৩ লাখ মে.টন গ্যাস অয়েল আমদানিতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ২৭৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। (২) প্যাকেজ-বি ‘তে ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড। ৭৫ হাজার মে.টন (জেট এ-১) আমদানি করতে ব্যয় হবে ৭৮০ কোটি ৬ লাখ টাকায় অর্থাৎ সর্বমোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার মে.টন জ্বালানি তেল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন- ২০১০’ (২০২১ সালের সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২২ সালের ১১তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশামূলক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা’র (সিসিইএ) অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ হতে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ১টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি’র (পিপিসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের নিকট থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ২৯.২৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সরবরাহ করবে। এজন্য মোট ব্যয় হবে ৯৯১ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘৩ মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট উপকরণ এর পরিবর্তে ৩ মিলিয়ন তৈরি ই-পাসপোর্ট বুকলেট আমদানির ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ প্রকল্পের আওতায় ২ মিলিয়ন পাসপোর্ট বুকলেট এবং ২৮ মিলিয়ন বুকলেট তৈরির কাঁচামাল জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচ এর কাছ থেকে ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৯০ টাকার ক্রয় প্রস্তাব ২০১৮ সালের ১১ জুলাই তারিখের সিসিজিপি সভায় অনুমোদিত হয়। সে অনুসারে দৈনিক প্রায় ১৬ হাজার ই-পাসপোর্ট তৈরি হচ্ছে।
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দেশে-বিদেশে ই-পাসপোর্টের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আপদকালীন চাহিদা মেটানোর জন্য ৩ মিলিয়ন বুকলেট তৈরির কাঁচামালের পরিবর্তে ৩ মিলিয়ন তৈরি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহকারীর কাছ থেকে আমদানির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৬ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার (+১০%) মে.টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক মরক্কো থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে টিএসপি সার আমদানি করা হয়। ২০২০ সালে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তগুলো অভিন্ন রেখে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর তারিখে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়। সার আমদানি চুক্তিতে উল্লেখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে মরক্কো থেকে ৫ম লটে ৩০ হাজার (+১০%) মে. টন টিএসপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট ৩ কোটি ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫৯ কোটি ৩৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় আমদানির প্রস্তাব প্রত্যাশামূলক অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, সভায় টেবিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সার ক্রয়ের আরো একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। দেশের কৃষিখাতের চাহিদা মেটাতে কাতার থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন গ্র্যানুলার বাল্ক ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২৪০ কোটি ৪২ রাখ ২৭ হাজার ৩৭৫ টাকা।