- ১৯৮ মামলায় বিচারিক হয়রানি
- বিশ্ববিবেকের অনুরোধ উপেক্ষা
লণ্ডন, ১ সেপ্টেম্বর: হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বঙ্গভূমির বিস্তৃত অঞ্চলের যে অংশটুকু স্বাধীন, ‘বাংলাদেশ’ নামক সেই স্বাধীন ভূখন্ডের ৫২ বছরের ইতিহাসে আজ অবধি মাত্র একজন মানুষ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সেই মানুষটার নাম মুহাম্মদ ইউনূস। কেবল নোবেলই নয়, সারা দুনিয়ার নানান প্রান্ত থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় দেড়শো আন্তর্জাতিক পদক, পুরস্কার, সম্মাননা ও সনদ অর্জন করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস হলেন পৃথিবীতে সাতজন ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম যিনি নোবেল, ইউএস কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল এবং ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পেয়েছেন। সভ্য সমাজে তিনি নিজ দেশের নাম উজ্জল করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যিনি ৬২টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ব্রাজিল অলিম্পিকে যিনি মশাল বহন করেছেন। যার ‘তিন শূন্য’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃস্মরণ) কে কেন্দ্র করে ফ্রান্স আগামী বছর অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই তিনি বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকা অনৈতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চক্ষুশূল হয়েছেন। তাঁকে টেনে নিচে নামানের জন্য, সভ্য সমাজ থেকে তাঁকে বিচ্যুত করার জন্য শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধ অনুগত ও সুবিধাভোগী একদল মানবাকৃতির প্রাণী তাঁকে প্রতিনিয়ত তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করছেন, অপমান ও অপদস্থ করছেন। এমনকি তাঁর সেই নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবিও জানাচ্ছেন। শেখ হাসিনা তাঁকে পানিতে চুবিয়ে মারতে চাইছেন। অনেকেই মনে করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়া ও এক এগারোর সময়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাওয়াটাই তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি ও রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাওয়ার বিষয়টা শেখ হাসিনা মেনে নিতে পারছে না। এজন্য ড. ইউনূসকে তিনি নানাভাবেই হেনস্তা করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পরে ড. ইউনুসকেই শেখ হাসিনা তাঁর প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছেন। ড. ইউনুসের পক্ষে দেশীয়-আন্তর্জাতিক ব্যক্তি ও সংস্থা বিবৃতি দিলে তিনি তাদেরও সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। একাজে অনুগত মিডিয়া কর্মী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মীদের তিনি ব্যবহার করছেন। পাল্টা বিবৃতি দিয়ে ঘরে-বাইরে তিনি ড. ইউনূসকে হয়রানি করছেন। গদী হারানোর ভয়ে তিনি আবোল তাবোল বকছেন। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। দেশের প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক সুদের মাধ্যমে ঋণ দিলেও তিনি শুধু ড. ইউনূসকে সুদখোরের তকমা দিচ্ছেন। গ্রামীন ব্যাংক কখনও ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছিল না। ব্যাংকটির সুদভিত্তিক কার্যক্রমের কোনও মুনাফা ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে কখনও ভোগ বা গ্রহনও করেননি। তাহলে তিনি সুদখোর হলেন কী করে!। সুদ না খাওয়া সত্বেও ড. ইউনূসকে সুদখোর বলে ঈর্ষার নীল বিষে বিষধর হয়ে শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে ড. ইউনুসকে ছোবল দিচ্ছেন। শুধু সুদখোর বলে গালি দেয়াই না, শেখ হাসিনা নানা কল্পিত এবং অপ্রমাণিত অভিযোগ তুলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে হরদম কুৎসা রটাচ্ছেন। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।
কেউ কেউ বলছেন, ‘ইসলামি ব্যাংকের মত গ্রামীণ ব্যাংকের বিশাল সম্পদের উপরেও কারও কারও চোখ পড়াটা স্বাভাবিক। সেটা হয়তো হজম করা সম্ভব হচ্ছে না ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতির কারণে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। দারিদ্রের অর্থনীতি তাঁর প্রিয় বিষয়। তিনি এই তত্ত্বের আলোকে বিনা বন্ধকিতে গরীব নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার ধারণার উদ্ভাবক ও প্রবর্তক। সামাজিক ব্যবসা কনসেপ্ট-এরও উদ্ভাবক ও প্রবর্তক তিনি। গ্রামীন ব্যাংক প্রচলিত ধারার কোনও ব্যাংক নয়, বরং জনকল্যাণমুখী একটি সৃজনশীল আইডিয়া, একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করেছে এবং এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের জন্য অফুরন্ত সম্মান ও মর্যাদা বয়ে এনেছেন। সেই জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই এ-সব কাজকর্ম তিনি করে আসছেন। জিয়াউর রহমানের পরের সরকারগুলোও তাঁর এ-সব কাজের অনুমোদন ও সহায়তা দিয়েছেন, কখনো হস্তক্ষেপ করেননি। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকার প্রতিহিংসাবশত তাঁকে গ্রামীন ব্যাংক থেকে তাড়িয়েছেন। শেখ হাসিনা আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে গ্রামীন ব্যাংক হতে আইডিয়ার প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনুসকে বিতাড়িত করেছেন। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে মাত্র তিনমাসের মাথায় তিনি যেভাবে নিজের নামের শেষ অংশে থাকা স্বামীর নাম রাষ্ট্রীয় ঘোষণার মাধ্যমে কেটে দিয়েছেন, সেভাবেই তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম সকল জায়গা থেকে কেটে দেওয়ার মিশনে নেমেছেন। শেখ হাসিনা তাঁকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন। ড. ইউনুস এখন ১৯৮ মামলার আসামী হয়ে সকাল-সন্ধ্যা শেখ হাসিনার আদালতে দৌড়াচ্ছেন।
১৯৮ মামলায় বিচারিক হয়রানি
এক এগারোর বেনিফিশিয়ারী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়েই দেশকে “সূদখোর মুক্ত করার” নামে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তারপর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিলো একের পর এক মামলা। ২০০৬ সালে ড. ইউনুস বলেছিলেন “আমাদের রাজনীতিতে নৈতিকতার কোন বালাই নেই”! এই কথার জন্য ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে শেখ হাসিনা তাঁর এক অনুগত কর্মীকে দিয়ে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ালেন যে এতে তাঁর মানহানি হয়েছে। শেখ হাসিনার অনুগত আদালত এই মামলাটি আমলে নিয়ে ড: ইউনুসকে যেদিন আদালতে হাজির হতে বাধ্য করেছিলেন সেদিন তাঁর ইউরোপে এক সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা ছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর হঠাৎ করে পাবনায় ‘শক্তি দই’ এ ভেজাল পাওয়া গেল। গ্রামীন শক্তি দই বানায় ড্যানোন কোম্পানী। ড. মুহাম্মদ ইউনুস এ কারখানার মালিকও নন, কর্মকর্তাও নন বা শেয়ার হোল্ডারও নন। অথচ ড্যানোন কোম্পানী বা ড্যানোনের কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলো না। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলো। এভাবে এই আওয়ামী জামানায় ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে একটা-দুইটা নয়, ১৯৮টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ড. ইউনূসকে ‘মালিক’ বানিয়ে দায়ের করা এই সব মামলার খুব কমই শ্রমিক-কর্মচারীদের দায়ের করা বরং প্রতিটি মামলাই শেখ হাসিনার সরকারি ইন্ধন ও উস্কানির ফসল বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। মামলা আইনের গতিতে চলছে এটাও বলার কোনো অবকাশ নেই। কেননা, প্রতিটি মামলার পেছনে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রম আদালতে দায়ের হওয়া এক মামলা সম্পর্কে স্বয়ং রাষ্ট্রের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বলেছেন, “ড. ইউনুসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। শ্রম আদালতে মামলা কীভাবে চলে, মামলার গতি কেমন থাকে – তা আমরা জানি। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলাটি অস্বাভাবিক গতিতে চলছে। অধ্যাপক ইউনূস ‘বিচারিক হয়রানির’ শিকার হচ্ছেন।” এই বিচারিক হয়রানি বা জুডিশিয়াল হ্যারাসমেন্ট কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দেশের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করছে। স্কাইপে কেলেঙ্কারীতে জড়িত বিচারক নিজামুল হক নাসিমকে অবসরের পর পুরস্কারস্বরুপ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। শামসুদ্দিন মানিককে ইভ্যালির অন্তরীন চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মামলার এক বিচারক তাঁর স্ত্রীকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বানানোর বিনিময়ে ফরমায়েশি রায় দিতে সম্মত হয়েছেন। এভাবেই শেখ হাসিনা সরকার দেশের বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। দলবাজদের নিয়োগের মাধ্যমে জঘন্য পন্থায় দলীয়করণ, অপছন্দের রায় দেওয়া বিচারকদের দেশ হইতে বিতাড়ন এবং ভীতিপ্রদর্শন ও আনুকূল্য বিতরণের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে শাসকদের ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন। শাসক দলের সাবেক ক্যাডারেরা এখন বিচারক পদে বসে নিজেদেরকে ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করছেন। ফলে ড. ইউনুসের মত ক্ষমতাসীনদের অপছন্দনীয় কারো পক্ষে এই আওয়ামী জাহেলিয়াতে ন্যায়বিচার লাভের কোনও সুযোগই নাই। বিচারের নামে অবিচার এখন স্বাভাবিক বাস্তবতা এবং আইনের প্রয়োগ ও বিচারের নামে ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধীদের হেনস্তা, শায়েস্তা ও সাজা দেয়াই এখন অন্যতম লক্ষ্য। আর তাই, ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতাদের নামে অতীতে দায়ের করা সকল মামলা নানা পন্থা ও প্রক্রিয়ায় উধাও হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে অজস্র মিথ্যা মামলায় বিরোধীদেরকে দ্রুতগতিতে সাজা দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনার এই আওয়ামী রেজিম শেয়ারবাজার লুটের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অর্থমন্ত্রী ও উপদেষ্টা বানিয়েছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে আওয়ামী মাফিয়াদেরকে দেয়া লাখো কোটি টাকার সুবিধাকে প্রশ্নাতীত ঘোষণা করে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিংয়ের নামে ডিজিটাল ডাকাতি করে জনগণের বিপুল অর্থ লোপাট ও বিদেশে পাচারের চিহ্ন মুছে দেওয়া গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে প্রফেসার এমিরেটাস করা হয়েছে। অলিগার্ক ও লুটেরাদের ব্যাংকঋণের শত শত কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। অনুগত বিচারকের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার পাচারের দায়ে অভিযুক্ত এস.আলমের তদন্ত ও বিচার স্থগিত করানো হয়েছে। এসব এখন আর গোপন কোনও বিষয় নয়। অথচ বিচারের নামে অবিচার ও হেনস্তার বিরুদ্ধে অন্য কেউ আপত্তি তুললে তা বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ বলে ইতরসুলভ চাতুরি করছেন।
বিশ্ববিবেকের অনুরোধ উপেক্ষা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদটি এখন ব্যান্ডিট কুইনের মত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনুসকে পদ্মায় চুবানোর খায়েস প্রকাশ করেছেন। তাতেই প্রধানমন্ত্রীর অনুগত আদালত এই দু’জনকে কী করতে হবে তা বুঝে ফেলেছেন। খালেদা জিয়া জেলে আছেন। এমতাবস্থায় ড.ইউনূসের প্রতি কেমন আচরণ করা হবে সেই আশংকা থেকেই বারাক ওবামা এবং হিলারি ক্লিনটন সহ ১৬০ জন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব এগিয়ে এসেছেন। গত ২৮শে আগস্ট পৃথিবীর ১৬০ জন সুপরিচিত ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধীকার কর্মী ড. ইউনূসের পক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার-এর ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতি-দাতাদের মধ্যে ১২০ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। সে চিঠিতে তাঁরা অধ্যাপক ইউনূসের কারাদণ্ড হতে পারে এমন আশংকা ব্যক্ত করেছেন এবং ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার আহবান জানিয়েছেন। সেইসাথে তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নিরপেক্ষ বিচারক ও দেশের বাইরের আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের মাধ্যমে পর্যালোচনার আহবান জানিয়েছেন। বলেছেন, “আমরা এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে ওনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করা হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন”। খোলাচিঠিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটাধিকার নিয়েও তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত মে মাসে বিশ্বের ৪০ জন রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একই ধরণের খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বিশ্ববিবেকের অনুরোধ উপেক্ষা করে তাঁর অনুগত দলবাজ ব্যক্তিদের দিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন। বিশ্ববিবেকের এই বিবৃতির ওজন বা গুরুত্ব পরিমাপের শক্তি শেখ হাসিনা সরকার এবং তাঁর ল্যাস্পেন্সাররা হারিয়ে ফেলেছেন! উপরন্তু ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির চিঠি দেয়ার খবর যেদিন প্রকাশিত হয়েছে, সেদিনই নতুন করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আরো ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার বাদী শ্রমিকের মধ্যে অনেকেই চার-পাঁচ বছর আগে অবসরে গেছেন। তাহলে এতদিন পরে আজ কেনো তাঁরা হঠাৎ এই মামলা করেছেন? এমন প্রশ্নে বাদীপক্ষের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন বলেছেন, “সেই ব্যাখ্যা আমার কাছে নাই।” গত ২৯শে অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “যারা বিবৃতি দিয়েছে তাঁরা এক্সপার্ট পাঠাক, ল ইয়ার পাঠাক.. যার বিরুদ্ধে মামলা তাঁর দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুক যে সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি-না। তাঁরা এসে দেখুক। তাদের এসে দেখা দরকার কী কী অসামঞ্জস্যতা আছে। লেবার ল নিয়ে তো অনেক কথা শুনতে হয়। এমন অনেক নোবেল লরিয়েট আছেন যারা পরবর্তীতে তাদের কাজের জন্য জেলে গেছেন। তাই আমি বিবৃতি দাতাদের আহবান জানাচ্ছি যে – এক্সপার্ট পাঠান.. সব যাচাই করে দেখেন। নয়তো আইন আদালত আছে শ্রম আদালত আছে- আইন তার আপন গতিতে চলবে। আমার আর কোন কথা নেই”। বিশ্ববিবেকের মামলা স্থগিতের অনুরোধ উপেক্ষা করে অনৈতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আহ্বান করেছেন শেখ হাসিনার সেই আহ্বানে বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন সাড়া দিয়েছেন। ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন তাই তাদের বাংলাদেশে আসতে সরকারের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
অবিচল ইতরামির পারসোনিফিকেশন
ড. ইউনূসের কাজের সমালোচনা করা যেতেই পারে, অপরাধ করলে তাঁর বিচার হতেই পারে , কিন্তু ড. ইউনূসকে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে সেটা ন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে। ড. ইউনুস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে সংঘবদ্ধ মিথ্যা প্রচারণার শিকার হচ্ছেন। অনৈতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বিচারাধীন বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়ে নানা কল্পিত এবং অপ্রমাণিত অভিযোগ তুলে ড. ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রতিনিয়ত আদালতকে প্রভাবিত করছেন। ড. ইউনূসকে শায়েস্তা করার ব্যাপারে শেখ হাসিনার এই বৈচারিক রথযাত্রা থামাতে ১৬০ জন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব বিবৃতি দিয়েছেন। সর্বশেষ জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আইনি প্রক্রিয়ায় হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। তারপরেও শেখ হাসিনা অবিচল আছেন। উপরন্তু আওয়ামী বিবৃতিজীবীরা বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি ও নোবেল লরিয়েটদের ‘খরিদযোগ্য’ বলে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করেছেন। এবং তাদেরকে আইনের তালিম প্রদানের কোশেশ করে হাস্যকর ও ধৃষ্টতাপূর্ণও আচরণ করেছেন। এখন দেখার বিষয় তাদেরকে কী ভাষায় তাঁরা জবাব দেন।
বৃটিশ বাংলাদেশি এমপি রূপা হক বলেছেন, “এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কোন স্বাভাবিক দেশ নয়, এটি এক ধরণের দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র বা কাছাকাছি! এখন এটি অত্যন্ত কঠোর ও কর্তৃত্বপরায়ণ একটি ক্ষমতাব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার পরিমাপের সকল সূচক বা মানদণ্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন খুবই নিপীড়নমূলক একটি রাষ্ট্র। এতদিন বাংলাদেশের জনগন ছিল এই অবস্থার মধ্যে। এখন টের পাচ্ছে সারা বিশ্ব। আর এ থেকে পরিত্রাণ ঘটানোই সভ্য বিশ্বের প্রধানতম কাজ।