ত্রিপুরায় সুকল ও কলেজ ছাত্রছাত্রীদের থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফি নেওয়া হত, তার অনেকাংশেই মকুব করেছে রাজ্য সরকার৷ করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই এ বছর ফি মকুব করা হয়েছে বলে সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ ত্রিপুরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ত্রিপুরা প্রদেশ৷
বুধবার শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের ৪ জুন বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরের এক বিজ্ঞপ্তিমূলে প্রতিবছর ছাত্রছাত্রীদের কছ থেকে ন্যূনতম ফি নেওয়া হয়৷ প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের থেকে স্পোর্টস ফি ১০ টাকা, সাংসৃকতিক অনুষ্ঠানের জন্য ১০ টাকা, লাইব্রেরি ফি ৫ টাকা এবং শিক্ষক দিবসের জন্য ৫ টাকা করে ৩০ টাকা নেওয়া হতো৷ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের এই ফি ছিল ৩৫ টাকা৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই ফি বিদ্যালয় প্রধানরাই সংশ্লিষ্ট খাতে খরচ করে থাকেন৷ কিন্তু এ বছর করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষা দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে এই ফি নেওয়া হবে না৷
তাঁর কথায়, বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণিতে পাঠরত ৫ লক্ষ ৯২ হাজার ২৪৭ জন ছাত্রছাত্রীকে এই ফি দিতে হবে না৷ তাতে, মোট ফি মকুব করা হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লক্ষ ২৬ হাজার ৪১০ টাকা৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ফি অনেকাংশই মকুব করা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ২২টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে পাঠরত ৪৭,২৪৯ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারে ফি দিতে হয়৷ আর্টস পাস কোর্সে প্রথম সেমিস্টারে ছাত্রছাত্রীদের দিতে হয় ৬৩৬ টাকা৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ৩২৬ টাকা মকুব করেছে৷ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে ৩১০ টাকা৷ সায়েন্স, কমার্স ও অনার্সের ছাত্রছাত্রীদের প্রথম সেমিস্টারে দিতে হয় ১,১২৮ টাকা৷ এক্ষেত্রে মকুব করা হয়েছে ৭৮০ টাকা৷ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে ৩৪৮ টাকা৷ তৃতীয় সেমিস্টারে আর্টসের ছাত্রছাত্রীদের দিতে হয় ৩১৬ টাকা৷ এই ক্ষেত্রে ৩০৬ টাকা মকুব করা হয়েছে৷ দিতে হবে ১০ টাকা৷ পঞ্চম সেমিস্টারেও অনুরূপ৷ সায়েন্স, কমার্স ও অনার্সের তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারে দিতে হয় ৭৩৮ টাকা৷ এক্ষেত্রে দিতে হবে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় হলে ১২ টাকা এবং এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয় হলে ১০ টাকা৷ বাকি টাকা মকুব করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, সাধারণ ডিগ্রি কলেজের ক্ষেত্রে ১ কোটি ৪৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৬৭৪ টাকা মকুব করা হয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, বি.এড পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের প্রথম সেমিস্টারে ফি দিতে হয় ২১০ টাকা৷ এ বছর ১৫০ টাকা মকুব করা হয়েছে৷ দিতে হবে ৬০ টাকা৷ বিএডএ-র তৃতীয় সেমিস্টারে কোনও ফি লাগবে না৷ আইন কলেজের ক্ষেত্রে প্রথম সেমিস্টারে ফি দিতে হয় ৫০৭ টাকা৷ এ বছর ১৯৭ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ ছাত্রছাত্রীদের ৩১০ টাকা দিতে হবে৷
আইন কলেজে তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম ও নবম সেমিস্টার প্রতি ক্ষেত্রে দিতে হবে ১০ টাকা করে৷ আইন কলেজের ছাত্রছাত্রী ২৫৩ জন৷ তেমনি, মিউজিক কলেজে প্রথম সেমিস্টারে ফি ৬১৭ টাকা৷ এক্ষেত্রে ৩৪৫ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে ২৭২ টাকা৷ এই কলেজে তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে ১২ টাকা৷ মিউজিক কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ১৫৬ জন৷ একইভাবে আর্ট কলেজে প্রথম সেমিস্টারের ফি ৬৬২ টাকা৷ ৩৭২ টাকা মকুব করা হয়েছে, দিতে হবে ২৯০ টাকা৷ এই কলেজের তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারের পড়ুয়াদের ১০ টাকা করে দিতে হবে৷ এই কলেজে মোট ছাত্রছাত্রী ২০৬ জন৷
শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, টিআইটি-র ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১,১০০ জন৷ এই কলেজের প্রথম সেমিস্টারের ফি ৬,৯৩০ টাকা৷ এ বছর মকুব করা হয়েছে ৬,৭৩০ টাকা৷ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে ২০০ টাকা৷ টিআইটি-র ছাত্রছাত্রীদের তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সেমিস্টার কোনও ফি লাগবে না৷ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনগুলিতে মোট ছাত্রছাত্রী ২,৪১২ জন৷ তাদের ক্ষেত্রে প্রথম সেমিস্টারের ফি ৩,৬৬১ টাকা৷ এই ক্ষেত্রে মকুব করা হয়েছে ৪৬১ টাকা৷ দিতে হবে ৩,২০০ টাকা৷ পলিটেকনিকের তৃতীয় ও পঞ্চম সেমিস্টারের মকুব করা হয়েছে ৩৪০ টাকা৷ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে ৩,০০০ টাকা৷ তিনি জানান, কলেজ স্তরে মোট ৪ কোটি ৩১ লক্ষ ৭৭ হাজার ১৩২ টাকা ফি মকুব করা হয়েছে৷
এদিকে, ত্রিপুরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ৷ রাজ্য সরকার তাঁদের আবেদনে সাড়া দেওয়ায় সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে৷