ধর্মনগর, ত্রিপুরা : ধর্মনগরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতেও নানা পরিবর্তন এলেও এই শহরবাসীর প্রতীক্ষিত রেল ডিভিশনের দাবি আজও অধরা। এদিকে, দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত দাবি আদায়ে “ডু অর ডাই” আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রেল ডিভিশন ডিমান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটি।
প্রসঙ্গত, ধর্মনগরের ইতিহাসে রেলপথের সূচনা হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। আসামের তিলভূম থেকে চুরাইবাড়ি হয়ে রেলপথ রাজ্যের প্রবেশদ্বার ধর্মনগরে পৌঁছায়। এই শহরেই স্থাপিত হয় রাজ্যের প্রথম রেল স্টেশন। কিন্তু ঐতিহাসিক রেল স্টেশনটি এখনও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। ধর্মনগরবাসীর এই আক্ষেপ ও হতাশা মেটাতে ৯০-এর দশকে গঠিত হয়েছিল রেল ডিভিশন ডিমান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটি। এটি ছিল একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, যার মূল লক্ষ্য ছিল ধর্মনগর এবং আশপাশের এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
বর্তমানে ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা, যেমন—কন্দোব্য ভট্টাচার্য, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি রনজয় দেব, জেলা কংগ্রেস সভাপতি অ্যাডভোকেট অজিত দাস, বিশিষ্ট সাংবাদিক রাধাকান্ত নাথ ও মলয় দেব, শিক্ষক নেতা বাপ্পি দে, হিমাংশু পাল প্রমুখ।
এদিকে, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০২৪—এই তিন দশকে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ধর্মনগরবাসীর প্রতীক্ষিত রেল ডিভিশনের দাবি আজও অধরা। ধর্মনগরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতেও এসেছে নানা পরিবর্তন। বহু রাজনৈতিক নেতা ধর্মনগরের উন্নয়ন এবং দাবিদাওয়াকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করেছেন। অথচ এলাকাবাসীর মনের প্রশ্ন রয়ে গেছে—আসল উন্নয়ন কি আদৌ হয়েছে?
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং বিজেপি-র রাজ্য পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধর ধর্মনগরের একটি সমাবেশে রেল ডিভিশন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার প্রায় আট বছর পরও এই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এদিকে, ধর্মনগরের জনপ্রতিনিধিদের নিষ্ক্রিয়তা এবং সরকারের উদাসীনতায় শহরের জনগণের মধ্যে হতাশা আরও বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে রেল ডিভিশন ডিমান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটি আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি এই কমিটির কর্মকর্তারা জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়েছিলেন এবং আগামী ১৫ ডিসেম্বর একটি পূর্ণাঙ্গ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। উক্ত বৈঠকে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং চূড়ান্ত কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তারা।
এদিকে, সংগঠনের জনৈক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার তারা দাবি আদায়ে “ডু অর ডাই” আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আন্দোলনের এই নতুন অধ্যায় ধর্মনগরের ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করবে, এই বিষয়ে আশাবাদী শহরের জনগণ।