পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: ভারতে চলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (লোকসভা ভোট) তৃতীয় ধাপের ভোট। মঙ্গলবার (৭ মে) এই পর্বে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১০ রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৯৩ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তবে যত কাণ্ড পশ্চিমবঙ্গে। সকাল থেকেই ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে মুর্শিদাবাদে অন্তর্গত আসনগুলো। ভোট শুরু হতেই মুর্শিদাবাদ থেকে বিক্ষিপ্ত গোলযোগের খবর আসতে শুরু করেছে। এই গোলযোগ রুখতে মাঠে নেমেছে মুর্শিদাবাদের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। রাজ্যটির লোচনপুর বুথ থেকে কলার ধরে এক ভুয়া এজেন্টকে বের করে দেন সেলিম। যদিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল শিবির।
এছাড়া মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে ২৮২ নম্বর বুথে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। মুর্শিদাবাদের ডোমকল দক্ষিণনগর মাঠপাড়ার ১৪৫ নম্বর বুথে ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। হরিহরপাড়া এলাকায় বোমাবাজির ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দেয় কুইক রেসপন্স টিম। অভিযোগ কংগ্রেস নেতার বাড়িতে বোমাবাজি করে তৃণমূল কর্মীরা।
এছাড়া ৩৬ নম্বর, ২৫৪ এবং ২৫৫ নম্বর বুথে বাম এজেন্টকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এদিকে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে জঙ্গিপুরের বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষের বিরুদ্ধে। ৮৮ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন রঘুনাথগঞ্জ ১ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। এরপরেই দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে ধাক্কা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে।
মুর্শিদাবাদের গোপীনাথপুর থেকেও তৃণমূলের ভুয়া এজেন্ট ধরলেন বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। একাধিক বুথে বিজেপি এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
ফলে সবমিলিয়ে রাজ্যে চার আসনে ভোট হলেও সবচেয়ে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ। রাজ্যের নির্বাচন কমিশন অফিসে ৩০০ বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে তৃণমূল শিবিরের বিরুদ্ধে।
মূলত রাজ্যের নিরিখে তৃতীয় ধাপের যে ভোট হচ্ছে তা হল উত্তরবঙ্গের দুই কেন্দ্র মালদা উত্তর ও মালদা দক্ষিণ। একই সঙ্গে ভোট হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ আসনে। দক্ষিণ তৃণমূলের শক্ত ঘাটি। ফলে এই চার রাজ্যে আসনে রক্তপাতহীন ভোট করানোটাই নির্বাচন কমিশনের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
যে কারণে এই চার কেন্দ্রে সবমিলিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪০০ আধা সামরিক সশস্ত্র সেনাবাহিনী। যারমধ্যে রয়েছে বিএসএফ, সিআরপিএফ সহ বিভিন্ন বাহিনির সদস্যরা। এছাড়া কুইক রেসপন্স টিমে ৩১ হাজারের বেশি রয়েছেন বাহিনির সদস্যরা। রয়েছে ১০ হাজারের বেশি রাজ্য পুলিশ। বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি তৃতীয় ধাপেও প্রতিটি বুথে রয়েছে ওয়েভ কাস্টিং ব্যবস্থা। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন কর্তারা, অফিসে বসেই লক্ষ্য রাখতে পারবে বুথের পরিস্থিতির উপর।
তবে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর রাজ্যের ৭ হাজার ৩৬৯ ভোটকেন্দ্র থেকে এলেও ভোটদানে এখন বিঘ্ন বা ব্যহত হয়েছে এমন খবর সামনে আসেনি।
বাংলার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল তৃণমূল এবং বিজেপি। পাশাপাশি এই চার কেন্দ্রে গুরুত্ব পাচ্ছে সিপিআইএম এবং কংগ্রেস। এছাড়া রয়েছেন বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী। সব মিলিয়ে চার আসনে মোট ৫৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করছেন ৭৪ লাখ ১১ হাজার ৭৫৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৮৫২ জন ও নারী ভোটার ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৫৬৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৫৬ জন।
পশ্চিমবঙ্গের চার আসনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ চলছর ভারতের গুজরাট (২৫), কর্ণাটক (১৪), মহারাষ্ট্র (১১), উত্তরপ্রদেশ (১০), মধ্যপ্রদেশ (৯), ছত্রিশগড় (৭), বিহার (৫), আসাম (৪), গোয়া (২) ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে দাদরা এবং নগর হাভেলি, দমন এবং ডিউ ২ আসনে। উল্লেখ্য, গুজরাটের মোট ২৬ আসনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে সুরাট আসনটি বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় জয় পাচ্ছে বিজেপি। ওই আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি।
তবে বাংলা বাদে দেশটির কোথা থেকে এখনও গোলযোগের খবর সামনে আসেনি। বেলা ১২টা পর্যন্ত ভারতে ভোট পড়েছে ২৬ শতাংশ। ব্যতিক্রম বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গে ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ।