সাগরিকা দাস, গুয়াহাটি: দেশভাগের চরম আর্তনাদ এখনও শরীর নুইয়ে দেয়৷ ফেলে আসা ভিটে, নিজের হাতে পোঁতা গাছ, প্রিয় বন্ধু — এক ঝটকায় সব হারানোর বেদনা আজও বাঙালি বহন করছে।
আমরা তো তবু দেশভাগ দেখিনি। সব হারিয়ে দেশভাগের শাস্তি শুধু ভোগ করছি এখনো, দেশভাগ দেখার চেয়ে এই বা কম কিসে। প্রতিদিন দেশভাগের ফল বুকে নিয়ে ঘুম থেকে উঠি, ঘুমোতে তাই। শুধু ‘নাই’ ‘নাই’!
সব আছে চারদিকে, তবুও “নাই”! এই নাই-র শেষ নাই। এই ক্ষতির বিচার নেই, সমাধানও নেই। আমাদের এই প্রজন্মের কপালে শুধু নাই। আজকে আমি যা, তা হয়তো নই,, কিন্তু আমাকে অভিনয় করে থাকতে হয়। আজকে আমার যা নেই, তা আমার ছিল, কিন্তু নাই তো নাই-ইইই!!!
দেশভাগ—!!!!
নিকষ কালো রাত, দরজায় টুকটুক– __বের হন,, তাড়াতাড়ি যেতে হবে এক্ষুনি!
_একটু পরে গেলে হয় না ভাই???!! একটু থাকি ঘরটায়! মাটিটা পায়ে লেগে আছে
_কী করে হবে বলেন?? ওরা আসছে! তারপর তো জানটা নিয়েও বেরোতে পারবেন না
_পরে থাকল দেশের মাটি,, বুকের লালনের সব,, জীবনের মায়া আগে। অন্ধকারে দাদু, দিদাদের নৌকায় ওঠা,, সোনাদানা কিছু সাথে
— দিদিমা চিড়া নিয়েছেন? হ্যাঁ (কান্না)
কাঁদবেন না দিদিমা,,, কী করবেন??
দাদুর হাতে দিদিমার হাত– একসাথে নৌকায় পা!!! চলল নৌকা!!
দেশ রইল পেছনে, মায়া রইল পেছনে,, সব পেছনে, এখন শুধু সামনে চলা। বৈঠার আওয়াজও যেন না হয় সেভাবে নৌকা চলল সন্তর্পনে—
শাড়ির আঁচল কাঁধে জড়িয়ে দিদা নামল নৌকা থেকে , দাদুর চোখ লাল,, হায়
কিন্তু সামনে আর কোথায় এগিয়ে চলা– আমরা তো পেছনেই রয়ে গেলাম তাঁদের পরের প্রজন্ম দেশভাগ আমাদের পথের ভিখিরি করেছে।
আমাদের অভিযোগ কোনোদিন শেষ হবে না। তবু দেশের একমুঠো মাটি চাই, পেলে সেই মাটিতে একটা গাছ লাগাবো!