বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ‘ঝিমিয়ে পড়া’ অর্থনীতির গতির ফেরাতে নতুন কৌশল নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সময়মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, উন্নয়ন কাজে সরকারি-বেসরকারি সম্পৃক্ততা বাড়ানো, রপ্তানির নতুন বাজার তৈরি করা এবং পণ্যে বৈচিত্র্য আনার মতো কৌশল রয়েছে।
মহামারীর মধ্যে প্রণোদনাসহ নানা পদক্ষেপে অর্থনীতির গতি ধরে রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ব্যাহত হয় পুরো পৃথিবীর পণ্য সরবরাহব্যবস্থা। এতে অস্থির হয়ে পড়ে ডলারের বাজার। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতিও। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ কারণে আগামীতে আর্থিক শৃঙ্খলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান সংকট কাটাতে সময়মতো মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন, উন্নয়নকাজে আরও বেশি সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) সম্পৃক্ততা এবং রপ্তানিকারকদের নতুন বাজার ধরতে সহযোগিতা দেওয়ার মতো বিষয় সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতেও নজর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, কর প্রশাসনে সংস্কার ও সহজে ব্যবসা পরিচালনায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ মহামারী থেকে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারে ফিরলেও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো দেখা যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি জনগণের জীবনযাত্রার মান ক্ষয় করে তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে।’
দেশের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের কাছে পাঠানো ‘আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও বাংলাদেশে সামষ্টিক-অর্থনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এতে দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অর্থনীতিতে তার প্রভাব নিরূপণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায়ে সাফল্য, মাথাপিছু আয়ের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়াসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করবে এবং তা চলমান বৈশ্বিক প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সহায়ক হবে। যুদ্ধ কত দিন ধরে চালবে তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। এই সংঘাতের বহুপক্ষের সম্পৃক্ততা এবং রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামর্থ রয়েছে দেশের রপ্তানিকারকদের। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি ও রাজস্ব সহায়তায় রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, নতুন বাজার তৈরি এবং অপ্রচলিত বাজারের অনুসন্ধান এবং সেবা রপ্তানির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কর আইন যুগোপযোগী করা, ত্রুটি কিংবা ফাঁকফোকর বন্ধ, মধ্য মেয়াদে বিনিয়োগ ও ব্যয় পরিকল্পনাকে সহায়তা করে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগাম সতর্কতার উদ্যোগ হিসেবে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ইত্যাদি উন্নয়ন সহযোগীদের পাশে পেতে চায় বাংলাদেশ। সরকার বাহ্যিক উৎস থেকে শুধু রেয়াতযোগ্য ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থপ্রদানের সামগ্রিক ভারসাম্যে ঘাটতি প্রসারিত হলেও সরকার একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ও অনুকূল বাহ্যিক অর্থপ্রদানের ভারসাম্য বজায় রাখতে আগ্রহী। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ দেনার টেকসইতা বিশ্লেষণ করে আইএমএফ ও আইডিএ। এতে উপসংহার টানা হয় যে, ‘রাজস্ব শৃঙ্খলা বাংলাদেশকে ঋণ সংকটের কম ঝুঁকিতে রেখেছে।’
ওই মূল্যায়ন অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে সরকারি দেনা ছিল জিডিপির ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০৩০-৩১ ও তার পরে গিয়ে ৪১.৮ শতাংশে স্থিতিশীল। বৈদেশিক ঋণের সঙ্গে জিডিপি অনুপাত ২০৪১-৪২ অর্থবছরের মধ্যে ১১ দশমিক ৬ শতাংশে স্থির হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাহ্যিক ঋণ ছিল ৯৭ দশকি ৫ শতাংশ, যা ২০৩১-৩২ অর্থবছর ও তারপরে ৯৩ শতাংশে স্থিতিশীল হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারকে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। শুধু তৈরি পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে জোর দিতে হবে। রপ্তানির বাজারেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। রপ্তানি পণ্যের মান উন্নয়ন করে আমরা যাতে ভালো দাম পেতে পারি, সেটার চেষ্টা করতে হবে।