জ্বালালি তেল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পীরগঞ্জের কাঁচা সবজির বাজারে! সবজির চড়ামূল্যের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ! গত ৩ দিন ধরে পীরগঞ্জের হাট-বাজারে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। অথচ উপজেলাতেই অনেক সবজির চাষ হয়।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দেশে প্রতি লিটার ডিজেলে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করায় যানবাহনের মালিকেরা পরদিন শুক্রবার থেকেই বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য পরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে এর প্রভাব পড়েছে কাঁচা সবজির বাজারে।
পীরগঞ্জের ১৫ ইউনিয়নেই বেগুন, পটল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, সিম, বরবটি, মরিচ, পেঁয়াজ, লাউসহ শীতের রবিশস্য ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। কৃষকের উৎপাদনকারী সবজি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খালাশপীর হাট, চতরা, মাদারগঞ্জ, ধাপের হাট, মাদারহাট, বড়দরগা, বালুয়া হাট, ভেন্ডাবাড়ী, শানেরহাটসহ বিভিন্ন হাটে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। আর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে এসে পীরগঞ্জের হাটগুলো থেকে সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান।
গত ৩ দিন পীরগঞ্জে পাইকারি ব্যবসায়ীরা না আসলেও হাট-বাজারগুলোতে সবজির খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
রোববার উপজেলার বালুয়াহাটে দেখা গেছে, কৃষকেরা যে দামে সবজি বিক্রি করছেন- বাজারে তা কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ওই হাটে ফুলকপি নিয়েই এসেছেন কৃষক আজমল হোসেন। তিনি বলেন, শীতের আগাম সবজি বাজারে আনলেও দাম কম। প্রতি মণ ফুলকপি ১৭শ টাকায় (কেজি ৪২ টাকা) বিক্রি করলাম। গতকাল হাটটিতে প্রতি মণ বেগুন ১৬০০ টাকা, পটল ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
বালুয়াহাট থেকে মাত্র দেড় কিমি দূরে পীরগঞ্জ সদর বাজার, পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, জামতলা ও থানার মোড়ের বউবাজারের খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি ফুলকপি, বরবটি, বেগুন, পটল ও করলা ৬০ টাকা করে, পাতা কপি ৫০ টাকা, গাজর, শিম ও টমেটো ১৪০ টাকায় বিক্রি করছে। এতে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
একজন ক্রেতা বলেন, হামার এটি তো সগি (সব) আবাদ হয়। ৩ দিন হলো গাড়ি-ঘোড়াও বন্দ। হামার এটি থাকি কোনোটে আলু, বাগুন, পোটোল যায় নাই। তারপরও এ্যাতো দাম ক্যা।
রোববার সকালে পীরগঞ্জ সদর বাজারের সবজি বিক্রেতা ফজলু মিয়া জানান, জমিতে আবাদ কম হওয়ায় দাম বেশি। তার পাশের ব্যবসায়ী আশিক মিয়া বলেন, প্রতি মণ ফুলকপি ১ হাজার ৭০০ টাকা, বেগুন ১ হাজার ৬০০ টাকা কিনেছি। খরচসহ প্রতি কেজি ফুলকপি, বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা আক্ষেপ করে বললেন, যেভাবে জিনিসের বাড়োছে, তাতে জীবন বাঁচাটাই দায় হলো! কাঁচা সবজির সঙ্গে ডাল, ত্যাল, চিনির যে দাম, কেনাই যায় না। হামরা বাঁচমো ক্যাংকরি! বউবাজারে আসা এক গৃহবধূ নাম না প্রকাশ করে বললেন, তরকারির বাজারোত এতুই দাম। প্রত্যেকটা তরকারিত মনে হয় আগুন নাগছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিরোদা রানী রায় বলেন, বাজারে সবজির দাম কতদিন ধরে বেশি হলো, তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।