গুয়াহাটি : আসামের খিলঞ্জিয়া বা ভূমিপুত্র জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত অসম চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ। গুরুত্বপূর্ণ এই ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডভাইজারি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। উচ্চআদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিপ্লবকুমার শর্মাকে ওই কমিটির অধ্যক্ষ মনোনীত করা হয়েছে। কমিটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে ইতিমধ্যে দাখিলও করেছে। প্রক্রিয়া অনুসারে অসম বিধানসভায় এই প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষভাবে পর্যালোচনা করার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার।
কিন্তু কমিটির তৈরি প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে আচমকা ১১ আগস্ট গোপনীয়তা ভেঙে প্রকাশ করেছে আসু। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
তাত্পর্যপূর্ণ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন অসম সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মমিনুল আওয়াল গরিয়া। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, রাজ্যের খিলঞ্জিয়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীয় মানুষের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করার স্বার্থে অসম চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ কার্যকর করার লক্ষ্যে অ্যাডভাইজারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেখা গেছে, ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছে। এতে মোগলের বংশধর ও পূর্বববঙ্গীয় মানুষরাও নাগরিকত্বের সুবিধা পেতে সক্ষম হবেন। ১৯৮৫ সালের চুক্তি অনুসারে পূর্ববঙ্গীয় লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভারতীয় নাগরিক বানানো হয়েছিল। বর্তমান ৫১ সালের ভিত্তি অনুযায়ী মোগলের বংশধর সহ তারা সকলেই নাগরিকতা পাবার পাশাপাশি প্রত্যেকের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত হবে।
একইভাবে অসমের যে সমস্ত অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে তাদেরও সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। মমিনুল বলেন, অসমের বড়ো, রাভা, মিসিং, কোচ, কছারি, আহোম, চুটিয়া, মরান, মটক, সনোয়াল, গরিয়া, মরিয়া, দেশীয় জনগোষ্ঠী রয়েছেন তাঁদের অনেকেই ১৯৫১ সালের কাগজপত্র দেখাতে পারবেন না। অথচ সাংবিধানিক সুরক্ষার অধিকার তাঁদের প্রাপ্য। এক্ষেত্রে কাগজপত্র জোগাড় করতে গিয়ে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা হবে এই সকল জনগোষ্ঠীয় ভূমিপুত্রদের। তাই প্রব্রজনের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীয় ভূমিপুত্র মানুষজনকে নাগরিকত্ব ও সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে সাল তারিখের প্রয়োজন নেই বলে স্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন মমিনুল আওয়াল গরিয়া।
তিনি আসু-র নির্ধারিত ৫১ সালের বিষয়টি বাতিল করে অসমের প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর ভূমিপুত্রদের সাংবিধানিক অধিকার প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি মোগলের বংশধর ও পূর্ববঙ্গীয় মানুষদের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ প্রদানের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।