জয়ন্ত চক্রবর্তী: সিনেমায় বিয়েবাড়িতে, রাজনৈতিক সভায়, পার্টির দৃশ্যে কিংবা কোনও জমায়েতে থাকতেন ওরা। কোনও ডায়লগ থাকতোনা। কিন্তু দৃশ্য গুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ওদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর জন্যে কেউ পেতেন দৈনিক ষাট টাকা রোজ, কেউ আশি কিংবা একশো। উপরি জুটতো ডিম টোস্ট আর দুপুরের ভাত। জলের মতো ডাল আর এক টুকরো মাছ। তাই নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন ওরা। টালিগঞ্জ এর ষ্টুডিও পাড়ার এক্সট্রারা।
কিন্তু নির্মম করোনা নিরন্ন করছে তাঁদের। আবার শুটিং শুরু হচ্ছে টালিগঞ্জে। কিন্তু করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব রাখার নতুন নিয়ম কানুন নিয়ে, টেলিভিশন এর সিরিয়াল এর শুটিংই হোক কিংবা সিনেমার শুটিং, পঁয়ত্রিশ জনের বেশি কেউ থাকতে পারবে না সেটে। এক দিনের শুটিংয়ে টেকনিশিয়ানই লাগে প্রায় ত্রিশশজন। এরপর অভিনেতা – অভিনেত্রীরা আছেন। এক্সট্রাদের আর জায়গা নেই সেটে। স্বাভাবিকভাবেই চিত্রনাট্যকাররা ছবির কাহিনী সাজাচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে ভিড়ের দৃশ্য। কাজ হারাচ্ছেন টালিগঞ্জ এর কয়েক হাজার মানুষ। মাছলন্দপুরের বীরু বসু এইরকমই একজন আশি টাকার এক্সট্রা। ভোরের ফার্স্ট ট্রেন ধরে চলে আসতেন টালিগঞ্জে। টেকনিশিয়ান স্টুডিওর রবীন্দ্রনাথের মূর্তির তলায় দাঁড়াতেন। চেনা দালাল মারফত কাজ পেতেন। দালালির কুড়ি টাকা দিয়েও রাতে বাড়ি ফেরার সময় স্টেশন বাজার থেকে অবশিষ্ট ষাট টাকা দিয়ে শাকটা , মুলোটা কিনে নিয়ে যেতেন। একবার পার্টির দৃশ্যে রীতিমতো শুট পরে উত্তমকুমারের পাশে দাঁড়িয়ে শরীর দুলিয়েছিলেন। সেই বীরু বসু কাজ হারিয়েছেন। করোনারে নিষ্করুণ থাবায় বীরু বসুর মতো অসংখ্য নারী পুরুষ কাজ হারালেন। হলিউড, বলিউড এর পরই টলিউড এর নামডাক। সেখানে এখন হাহাকার। শুধু কি এক্সট্রারা? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, পরান বন্দোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, চিত্রা সেন এর মতো বর্ষীয়ান অভিনেতা – অভিনেত্রীরাও বিপাকে। সরকারের ফতোয়া, পঁয়ষট্টি ঊর্ধ্ব কাউকে নিয়ে এখন শুটিং করা যাবে না। কি করবেন এই বর্ষীয়ানরা? অনেকেরই রুটি রুজি তো এই অভিনয়ই। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সবকটি সংগঠন বৃহস্পতিবার একটি বৈঠকে বসছে। দেখা যাক, সেই বৈঠকে আলোর দিশা মেলে কিনা!