নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এক হাজার ৩৬২ বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্য হঠাৎ করে ১৪৮ জনের ভাতা আটকে গেছে। তবে ভাতা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো চিঠি পাননি এসব মুক্তিযোদ্ধা। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ১৯৯৬ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত তারা প্রতি মাসে নিয়মিত ভাতা পেলেও চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি জুন মাস পর্যন্ত ভাতা পাচ্ছেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বেগমগঞ্জে সরকারি গেজেট অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৩৬২ জন। তাদের প্রত্যেকের ভাতার টাকা প্রতি মাসে সোনালী ব্যাংক চৌমুহনী শাখায় আসে। ফেব্রুয়ারি মাসে সবার ভাতা এলেও এই ১৪৮ জনের আসেনি। তাদের ভাতা ব্যাংকে না আসার বিষয়টি স্বীকার করেন ব্যাংক ম্যানেজার। তবে কী কারণে তাদের ভাতা আসেনি, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
ভাতা না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— মজিবুল হক, আজিম উদ্দিন, লোকমান আহম্মদ, বেলায়েত হোসেন, নাদরের জামানের স্ত্রী জায়েরা বেগম, মো. শহীদ উল্যা, মৃত মমতাজ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম, মো. শহিদ উল্যা বাচ্চু, আক্তারের জামান, লাতু মিয়া, নুরুল ইসলাম মাস্টারসহ ১৪৮ জন।
মজিবুল হক বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে নিয়মিত ভাতা পেতাম। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হলো, সেই উত্তর নেই কারও কাছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৪ সালের যাচাই-বাছাই তালিকা করে আমাদের নাম রেজ্যুলেশন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশকে হানাদার বাহিনীর হাতে থেকে মুক্ত করতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।
মো. শহিদ উল্যা বাচ্চু বলেন, এতদিন নিয়মিত ভাতা পেয়ে এসেছি। হঠাৎ ফেব্রুয়ারিতে কী হলো টাকা ব্যাংকে আসেনি। কোনো চিঠি বা নোটিশও দেয়নি। শুনেছি অনেকের বিএনপি করার কারণে সম্মানীভাতা আটকে গেছে।
ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা মৃত মমতাজ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ভাতা চালুর পর থেকে আমার স্বামী ভাতা পান। তিনি মৃত্যুবরণ করলে স্বামীর অধিকারে আমি ভাতা পাই। আমার স্বামী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কোনো অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। তবে কেন আমার ভাতা বন্ধ করল তার জবাব পাচ্ছি না কারও কাছ থেকে।
ভাতা বন্ধের বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙালি বলেন, পুরনো ও নতুন তালিকার মধ্য থেকে ১৪৮ জনের ভাতা বন্ধ রয়েছে। ২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাই-বাছাইতে যাদের নাম বাদ পড়েছে, ভাতার জন্য যারা এমএস করেনি বা হাজিরা দেয়নি মূলত তাদের ভাতা বন্ধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আবার অনেকের যাচাই-বাছাই নাম আছে, এমএস ও হাজিরা দিয়েছে তাদেরও অনেকের ভাতা আসেনি। এই ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুন নাহার জানান, নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাইয়ের সময় যাদের ব্যাপারে আপত্তি এসেছে তাদের ভাতা বন্ধ হতে পারে। তবু আমরা বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের।
যাদের ভাতা বন্ধ তারা কি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বা এত দিন তারা যে ভাতা নিয়েছেন সেগুলোর কি হবে বা যদি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয় তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, সেটি তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার, কে ভুয়া আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয় আমাদের নির্দেশনা দিলে আমরা সেই মতে কাজ করব।