বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত এমনিতেই কঠিন। পদ্মা সেতু চালুর ফলে ঢাকার প্রবেশপথে বেড়ে গেছে গাড়ির চাপ। ছিল বৃত্তাকার সড়কপথের পরিকল্পনা। তাও হবে হবে করে বহুদূর। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, হানিফ ফ্লাইওভার অঞ্চলে গাড়ি চলাচল দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় ঢাকার প্রবেশপথের বিকল্প সংযোগ তৈরিতে ৬টি সেতু নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। জাইকার অর্থায়নে এ বিকল্প সংযোগ স্থাপনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে।
নড়াইল জেলার কালনাখ্যাত মধুমতী সেতু ও নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু পদ্মা হয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করেছে। এখন দরকার ঢাকার প্রবেশপথে বিকল্প যাতায়াত। এ জন্য ছয়টি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে সওজের ঢাকা জোন। ঢাকা শহরে না ঢুকে যেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গাড়ি পদ্মা সেতু অতিক্রম করতে পারে, সেটা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এর যৌক্তিকতাও আছে।
বর্তমানে গাবতলী বা উত্তরা-টঙ্গী দিয়ে কোনো দূরপাল্লার যাত্রীবাহী গাড়ি সায়েদাবাদ এলাকায় যেতে পারছে না। শহরের ভেতর দূরপাল্লার গাড়ি চলা আইনত নিষিদ্ধ। এ কারণে কেবল সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে চাপ পড়ছে। তা ছাড়া পদ্মা সেতুর সুফল পুরোপুরি মিলছে না।
তাই মোহাম্মদপুর এলাকার বছিলা সেতুর সংযোগ সড়কে ভায়াডাক্টসহ ৯৬০ মিটারের সেতু নির্মাণ করা হবে। বর্তমান বছিলা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৬২ মিটার। তা ছাড়া গাবতলী থেকে সোয়ারীঘাট সড়কে সোয়ারীঘাট সেতু নির্মাণ করতে হবে। ভায়াডাক্টসহ এটি হবে ১৩০০ মিটার। প্রস্তাবিত ইনার সার্কুলার রোডের মধ্যে এ সেতুটি হবে। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর কামরাঙ্গীরচর-কেরানীগঞ্জ সংযোগ স্থাপনের জন্য হবে কামরাঙ্গীরচর সেতু। ভায়াডাক্টসহ এ সেতুটি হবে ৮১০ মিটার। কামরাঙ্গীরচর (পূর্ব রসুলপুর)-কুড়ারঘাট-শিয়ালখালী-আশরাফাবাদ নুরিয়া মাদ্রাসা-কেরানীগঞ্জ (কোনাখোলা) সড়কে হবে এ সেতুটি। বর্তমানে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে হবে দ্বিতীয় পোস্তগোলা সেতু। ভায়াডাক্টসহ এটির দৈর্ঘ্য হবে ৮৬১ মিটার। প্রথম পোস্তগোলা সেতুটিও একই আকারের। হাসনাবাদ-কুন্ডা-পঞ্চবটি সড়কে হবে কুন্ডা সেতু। ভায়াডাক্টসহ ১০৫০ মিটারের এ সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া উলুখোলা-ডাঙ্গাবাজার সংযোগ সড়কে নির্মিত হবে ডাঙ্গাবাজার সেতু। ৮০০ মিটারের এ নতুন সেতুটিও জাইকার অর্থায়নে নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে সওজ। ঢাকার আশপাশের এসব সেতু নির্মাণের ফলে শহরের পথে গাড়িজট থাকবে না।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান আমাদের সময়কে বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে যাতায়াত সহজ করতে নানামুখী চেষ্টা করছে সরকার। এর মধ্যে সওজ বেশ কয়েকটি ছোট আকারের সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেছে। এর ফলে ঢাকার প্রবেশপথের বিকল্প সংযোগ পথ তৈরি হবে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মানুষ ছুটে যেতে পারবে রাজধানী এড়িয়ে।
জানা গেছে, গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর গাবতলী, মহাখালী, টঙ্গী বা উত্তরার গাড়ি পদ্মা সেতুতে সহজে যেতে পারছে না। কেবল সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা দিয়ে চলাচলের কারণে ওই অঞ্চলে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এর জেরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও গাড়ি আটকে থাকে। অথচ বৃত্তাকার সড়কপথটি চালু হলে অনায়াসে পদ্মা পাড়ি দেওয়া সম্ভব হতো। গত ১০ অক্টোবর নড়াইলের মধুমতী সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সারাদেশের যোগাযোগব্যবস্থা এক সুতায় গাঁথা হলো। একই দিনে নারায়ণগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতুটি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শীতলক্ষ্যা সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের দূরত্ব অন্তত ২০ কিলোমিটার কমেছে। আর মধুমতী সেতু চালুর ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল-যশোর অঞ্চলের দূরত্ব কমবে প্রায় ২শ কিলোমিটার। আর ঢাকাকেন্দ্রিক ছোট আকারের ছয়টি সেতু নির্মিত হলে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন চলবে বিনা যানজটে।
দক্ষিণের যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে মদনপুর হয়ে চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট যেতে পারবেন। যারা খুলনা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এলাকার মানুষ- তারা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই সরাসরি চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একটা বড় দূরত্ব কমে যাবে। যানবাহনগুলো রাজধানীর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে পারবে। এতে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ওপরও চাপ কমবে।