- ২০ হাজার বাংলাদেশির পাসপোর্ট ফেরত।
- চিকিৎসা-আপৎকালীন ছাড়া ভারতীয় ভিসা বন্ধ।
লণ্ডন, ০২ অক্টোবর- গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সেক্টরে দিল্লী তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষপটে কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ছাড়াই ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে বন্যার পানিতে ডুবিয়েছে। এবার আপৎকালীন ও চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্য কোনো ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে দেশটি। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ এবং হুমকিমূলক ই-মেইল দেওয়ার প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, আপাতত বাংলাদেশিদের চিকিৎসার এবং জরুরি প্রয়োজনে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। যখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু হবে এবং ভিসা প্রদানও স্বাভাবিক হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেয় ভারত। বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে ভারতীয় দূতাবাসের বহু কর্মীকে ভারতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলো পুনরায় কাজ শুরু করে। তবে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে ভিসা না পেয়ে ঢাকার ভারতীয় ভিসা প্রদান কেন্দ্রে বিক্ষোভও দেখান অনেকে। এর জেরে ফের ব্যাহত হয় কাজ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো ভারত।
এদিকে ভারতীয় দূতাবাস এবং ভিসা কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার পর সেপ্টেম্বর থেকে আবার জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়। অন্যদিকে, ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক খবরে জানিয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ এবং হুমকিমূলক ই-মেইল দেওয়ার প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকায়, পাসপোর্টগুলো ভারতীয় হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতীয় হাইকমিশন। তবে পরবর্তীতে সীমিত সংখ্যক জরুরি ভিসার আবেদনগুলো প্রক্রিয়া করা শুরু হয়। এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ভিসা আবেদন যেমন: মেডিকেল ইমার্জেন্সি, স্টুডেন্ট এবং তৃতীয় দেশে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ডাবল-এন্ট্রি ভিসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এর কারণে হতাশাগ্রস্ত আবেদনকারীদের অনেকেই ব্যাপকভাবে হাইকমিশনে ই-মেইল করছেন, এমনকি কিছু ইমেইলে ভাঙচুরের হুমকিও রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভিসা আবেদন কেন্দ্রের সদস্যরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো জনগণের অসন্তোষ প্রকাশের স্থানে পরিণত হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, বাংলাদেশ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিসা আবেদনকারী দেশ। শুধু ২০২৩ সালে প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা ইস্যু করেছিল ভারত, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে চার লাখ ভিসা ইস্যু হয়েছিল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। তবে দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার কারণে সাবধানতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে হাই কমিশন। অস্থায়ী ভিসা প্রদানে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
যেহেতু বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক মিশনের সংখ্যা সীমিত, তাই বাংলাদেশিরা প্রায়ই ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে ভিসার জন্য ভারতের উপর নির্ভরশীল। এখন দুর্গাপূজা ঘনিয়ে আসায়, পশ্চিমবঙ্গে উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য ভিসার আবেদন বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারত বাংলাদেশে ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে ভারতীয় দূতাবাসের বহু কর্মীকে ভারতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। আপাতত শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান করা হবে।