পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভুলের কারণেই ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) আলাদা হয়েছে- তা মেনে নেয়ার এটাই হচ্ছে উপযুক্ত সময়। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর লেখা ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) এ আর সিদ্দিকীর সাম্প্রতিক বই ‘জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান: দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অব এ সোলজার’-নিয়ে বৃহস্পতিবার অনলাইনে আলোচনায় এসব কথা বলেছেন ইতিহাসবিদ ড. মুবারক আলী। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের অনলাইন দ্য নিউজ। এতে বলা হয়, ড. মুবারক আলীসহ একাধিক আলোচক ওই সময়ে বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিরা, বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠী যে অবমাননাকর অবস্থান নিয়েছিলেন, তার ফলেই বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রতি যে বৈষম্য দেখানো হতো তাও আলোচকরা তুলে ধরেন।

এতে ড. মুবারক আলী আরো বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এটাকে ‘ঢাকার পতন’ বলার চেয়ে আমাদের বলা উচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। অনলাইনের ওই আলোচনায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. রিয়াজ শেখ।

তিনি বলেন, যে কারণে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায় তার ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে বড় একটি ক্যারেক্টার ছিলেন ইয়াহিয়া খান। কিন্তু তাকে নিয়ে বেশি বই লেখা হয়নি। সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বই লেখার জন্য তিনি প্রশংসা করেন ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকীর। ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকী ১৯৭৩ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। দেশভাগের পর পর কাশ্মীরে লড়াইয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন তিনি। বলেছেন, ওই লড়াইকে আমরা জিহাদ বলে অভিহিত করি। ওই সময়ে এতে নেতৃত্ব দিয়েছিল বৃটিশ কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, দেশভাগের পর পাকিস্তানের বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীকে বলা হতো রয়েল পাকিস্তান এয়ার ফোর্স, রয়েল পাকিস্তান নেভি।

এরপর লেখক ওইসব ঘটনার বর্ণনা করেছেন, যার ফলে ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ হয়েছিল। পাকিস্তানের টেক্সট বইয়ে আজকাল যা শিখানো হচ্ছে, এ নিয়ে তার বর্ণনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, এটা এড়িয়ে যাওয়ার মতো বিষয় ছিল।

বইটির ভূমিকা লিখেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. হুমা বাকাই। তিনি মন্তব্য করেছেন, এই বইটি শুধু ইয়াহিয়া এবং ১৯৭১ সালের পরাজয় সম্পর্কেই আমাদেরকে জ্ঞান দেয় বা এ সম্পর্কে বিবৃত করে- এমন নয়। একই সঙ্গে সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তান নিজের ভেতর যে অন্তঃসংঘাতে লিপ্ত ছিল, সে সম্পর্কে আমাদের সামনে ভেতরের তথ্য তুলে ধরে। তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তান কীভাবে বার বার নেতৃত্ব সংকটে ভুগেছিল এই বইটি আমাদেরকে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন, ইয়াহিয়া কোনো নেতা ছিলেন না বা সুনির্দিষ্টভাবে এমন কেউ ছিলেন না, যিনি এই সংকটের সময়ে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা তাসনীম সিদ্দিকী পূর্ব পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানিরা বহুবার কীভাবে বাঙালিদের পরাজিত বা ব্যর্থ করেছে তা জোরালোভাবে ফুটিয়ে তোলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বাঙালিদের শোষণ করেছিল বৃটিশরা। বাঙালিরা মনে করতেন, পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্যেই তাদের কল্যাণ নিহিত আছে। তাই পাকিস্তান সৃষ্টিতে সামনের সারিতে ছিলেন বাঙালিরা। তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান যুগের সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য, আইয়ুব খানের যুগকে মাঝেমধ্যে উন্নয়নের দশক বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, আইয়ুব খানের আমলে পূর্ব পাকিস্তানে কোনোই উন্নয়ন হয়নি। নতুন নির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ। কিন্তু সেই অধিবেশন যখন ইয়াহিয়া স্থগিত করেন, তখন ঢাকায় ছিলেন তাসনীম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, অধিবেশন স্থগিত করায় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কীভাবে হতাশ হয়েছিলেন তা তিনি দেখেছেন। সে সম্পর্কে বর্ণনা করেন তিনি।

তাসনীম বলেন, নিজের বইয়ে বাঙালিদের জন্য একটি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করেছিলেন আইয়ুব খান। এতে ফুটে ওঠে যে, তিনি বাঙালিদের কতোটা ঘৃণা করতেন। তিনি সমালোচনা করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানিরা ১৪ই আগস্টকে বেশি আবেগ নিয়ে পালন করা সত্ত্বেও বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের যে মনোভাব, তা তাদেরকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য করেছে।

নিজস্ব ধরনের লেখার জন্য বইটির লেখকের প্রশংসা করেন শিক্ষাবিদ দুরিয়া কাজি। তিনি বলেন, লেখক ঘটনা প্রবাহ তার নিজস্ব স্টাইলে বর্ণনা করেছেন। এতে পাঠকদের মনে হবে, তারা ওই সময়ে উপস্থিত এবং সেই সব ঘটনা নিজেরা প্রত্যক্ষ করছেন।

6 thoughts on “পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভুলেই পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়েছে, ঘটনা প্রবাহের বড় ক্যারেক্টার ইয়াহিয়া”
  1. Today, I went to the beach with my children. I found a sea shell and
    gave it to my 4 year old daughter and said “You can hear the ocean if you put this to your ear.” She put the shell to her ear and screamed.
    There was a hermit crab inside and it pinched
    her ear. She never wants to go back! LoL I know this is
    completely off topic but I had to tell someone!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You missed