নীলগিরি, নীলাচল, নীল দিগন্ত…লকডাউনের এই কয় মাসে আরো ‘নীল’ হয়েছে। এত দিন মানুষের পদচারণ না থাকায় বান্দরবানের এসব পর্যটনকেন্দ্র নিজেকে সাজিয়ে-গুছিয়ে নেওয়ার অবসর পেয়েছে। নীল আঁচল বিছিয়ে অপেক্ষায় ছিল পর্যটকদের। গতকাল শুক্রবার সেই অপক্ষো ঘুচল। টানা পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর এদিন বান্দরবানের সব পর্যটনকেন্দ্রসহ হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট খুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রথম দিন কার্যত পর্যটকশূন্য ছিল পুরো বান্দরবান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পর্যটক আসতে পারেনি। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। এ ছাড়া আবহাওয়াও অনুকূলে নেই। বৃষ্টি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অভ্যর্থনার ডালি সাজিয়ে প্রতীক্ষায় রয়েছে সব কটি অবকাশকেন্দ্র। নীলগিরি, সাইরু রিসোর্ট, ভেনাস রিসোর্ট, হলিডে ইন, দি গাইড ট্যুরস-এর মিলনছড়ি হিল সাইড রিসোর্ট, বন নিবাস কিংবা সুবিশাল হোটেল হিলভিউ, বান্দরবান প্লাজা হোটেল, হিলটন, হিল কুইন, নাইট হ্যাভেন, পর্যটন মোটেল, গ্রিন পিকসহ সব কটি পর্যটক বরণে প্রস্তুত।
ঝুলন্ত সেতু, শিশু পার্ক, পিকনিক স্পট, কেবল কার এবং পেডাল বোট রাইডিং পয়েন্টও রয়েছে পর্যটকদের অপেক্ষায়।
সাইরু রিসোর্টের মুখপাত্র আর্কিটেক্ট ওয়াহিদ বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে তাঁরা ২৮ ও ২৯ আগস্টের জন্য বেশ কটি কটেজ বুকিং নিয়েছেন। ‘পর্যটন খোলার বিষয়ে পুরোপুরি জানাজানি হয়ে গেলে এই শরতে নিসর্গের রানি বান্দরবানে পর্যটকের ঢল নামবেই’, বললেন তিনি।
বাবুল জানান, নতুন আঙ্গিকে পর্যটকদের সেবা দিতে তাঁরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
বান্দরবান শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ন্যাচারাল পার্ক প্রতিবছর এই মৌসুমে পর্যটকে ভরা থাকে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, টানা পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় সংযোগ সড়ক এবং অভ্যন্তরীণ মেঠোপথগুলো (ওয়াকওয়ে) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। এগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে সপ্তাহখানেক লেগে যেতে পারে।
বান্দরবান জেলা হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এই সপ্তাহে বৃষ্টি থাকায় পর্যটক আগমনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। আগামী সপ্তাহে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসা জমে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনেক আশায় বুক বেঁধে এত দিন অপেক্ষায় ছিলেন থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির খুদে পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। প্রথম দিন পর্যটকের আগমন না ঘটলেও তাঁরাও প্রত্যাশা করছেন—সুদিন আসবেই।
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হিলভিউ হোটেল ও কনভেনশন সেন্টারে বিনিয়োগ করে হতাশায় ছিলেন কাজল কান্তি দাশ। ‘গত পাঁচ মাসে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আগামী কয়েক মাস পর্যটন ব্যবসা সচল থাকলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে’, বললেন কাজল।
বিশ্বময় করোনা মহামারি থাবা বসানোয় গত ২৩ মার্চ থেকে বান্দরবান জেলা প্রশাসন সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের পর্যটন বন্ধ করে দেয়। গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে শুক্রবার থেকে পর্যটন খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শামীম হোসেন জানান, পর্যটনসংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অঙ্গীকার করায় সীমিত পর্যায়ে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অনুুকূল থাকলে সাময়িক বিধি-নিষেধও তুলে নেওয়া হবে।